Header Ads

আগামীকাল নতুন সুর্য উঠবে। নতুন দিন শুরু হবে। নতুন একটি পৃথিবীর যাত্রা শুরু হবে। সেই পৃথিবীটা শুধু আল-কোরআনের। এই সপ্ন প্রত্যহই দেখি। শুধু বান্তবায়ন সময়ের অপেক্ষা............

ফরজ নামাজের পরে সম্মিলিত মুনাজাতের দলীল

  জিজ্ঞাসা :
আমাদের দেশে দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামা‘আতের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলে মিলে যে মুনাজাত করে, শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ আছে কিনা? অনেকে বলে, “নামাযের পর মুনাজাত বলতে কিছু নেই। অতএব, তা বিদ‘আত।” আবার অনেকে বলেছে, “নামাযের জামা‘আতের পর ইমাম-মুক্তাদী একত্রে মুনাজাত করা বিদ‘আত; একাকী মুনাজাত করা বিদ‘আত নয়” এ ব্যাপারে শরী‘আতের সঠিক ফায়সালা কী? বিস্তারিত জানতে চাই।



► সংক্ষিপ্ত জওয়াব :

নামাযের পর বা ফরজ নামাযের জামা‘আতের পর কোন প্রকার বাড়াবাড়ি ব্যতিরেকে আমাদের দেশে যে মুনাজাত প্রচলিত আছে, তা মুস্তাহাব আমল; বিদ‘আত নয়। কারণ-বিদ‘আত বলা হয় ঐ আমলকে, শরী‘আতে যার কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ উক্ত “মুনাজাত” বহু নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়াত দ্বারা সুপ্রমাণিত। এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল ও নির্দেশ বিদ্যমান। তাই যারা মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করে, তারাও ভুলের মধ্যে রয়েছে।আবার যারা ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিত মুনাজাতকে সর্বাবস্থায় বিদ‘আত বলে, তাদের দাবীও ভিত্তিহীন এবং মুনাজাতকে যারা জরুরী মনে করে, এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং কেউ না করলে তাকে কটাক্ষ করে, গালী দেয় তারাও ভুলের মধ্যে আছে।

► অবতরণিকা :

নামাযের পরের মুনাজাতকে সর্ব প্রথম যিনি ভিত্তিহীন ও বিদ‘আত বলে দাবী তুলেছিলেন, তিনি হলেন আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ)। পরের তদীয় ছাত্র আল্লামা হাফিয ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) তাঁর অনুসরণ করেন। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া ও হাফিয ইবনুল কাইয়িম দাবী করেন যে, নামাযের পর মুনাজাত করার কোন প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে নেই। যে সব রিওয়ায়াতে নামাযের পর দু‘আ করার কথা আছে, এর অর্থ-হচ্ছে-সালাম ফিরানোর পূর্বের দু‘আয়ে মাছুরা।তাদের এ দাবীর খন্ডনে বুখারী শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাদাতা, জগৎবরেণ্য মুহাদ্দিস, হাফিয ইবনে হাযার আসকালনী (রহঃ) বলেন, ‘ইবনুল কাইয়িম প্রমুখগণের দাবী সঠিক নয়। কারণ-বহু সহীহ হাদীসে সালামের পর দু‘আ করার স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। সুতরাং ঐসব হাদীসে যে নামাযের শেষে দু‘আ করার কথা আছে, তার অর্থ সালাম ফিরানোর পরে দু‘আ ও মুনাজাত।
[দেখুনঃ ফাতহুল বারী, ২:৩৩৫/ফাতহুল মুলহিম, ২:১৬ পৃঃ]

এমনিভাবে ইবনুল কাইয়িম ও তাঁর উস্তাদের উক্ত অমূলক দাবীর প্রতিবাদ করে আল্লামা যাফর আহমদ উসমানী (রহঃ) ‘ই’লাউস সুনান’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন-“ইবনুল কাইয়িম প্রমুখগণ ফরজ নামাযের পরের দু‘আকে অস্বীকার করে তৎসম্পর্কিত হাদীস সমূহকে সালাম ফিরানোর পূর্বের দু‘আয়ে মাছুরা বলে বুঝাতে চেয়েছেন বটে, কিন্তু তাদের এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়। কারণ-অনেক সুস্পষ্ট হাদীস তাদের এ ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে বিদ্যমান। সুতরাং স্পষ্ট হাদীস বিরোধী এ ব্যাখ্যা গ্রহণপযোগ্য নয়।”
(ইলাউস সুনান, ৩:১৫৯)

যারা নামাযের পরের মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করেন, তাদের জবাবে উল্লেখিত উদ্ধৃতিদ্বয়ই যথেষ্ট।

আর যারা বলেন, নামাযের পর একাকী মুনাজাত করা যায়; কিন্তু ইমাম ও মুক্তাদীগণের জন্য সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদ‘আত; তাদের এ দাবীর স্বপক্ষে যেহেতু কোন মজবুত দলীল বিদ্যমান নেই, অর্থাৎ কুরআন ও হাদীস বা ফাতওয়ার কিতাব থেকে তারা এমন একটি দলীলও পেশ করতে পারেন নাই, যার মধ্যে সম্মিলিত মুনাজাতকে নাজায়িয বা বিদ‘আত বলে তার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তাই তাদের এ দাবীও গ্রহণীয় নয়।

‘নামাযের পর মুনাজাত প্রসঙ্গে হাদীসসমূহ ব্যাপকতা সম্পন্ন। এ হাদীস সমূহে মুনাজাতের কোন ক্ষেত্র-বিশেষের উল্লেখ নেই। অতএব, হাদীস সমূহের ব্যাপকতার ভিত্তিতে নামাযের পর সর্বক্ষেত্রের মুনাজাতই মুস্তাহাব বলে বিবেচিত হবে। মূল ভিত্তি সহীহ হাদীসে বিদ্যমান থাকার পর বিদ’আতের তো কোন প্রশ্নই উঠে না।
(ফাইযুল বারী : ২/৪৩১ )

হাদীসে সম্মিলিত মুনাজাতের গুরুত্বের বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। ফিকহের কিতাব সমূহেও ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিত প্রচলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। অসংখ্য হাদীস বিশারদগণের রায়ও সম্মিলিত মুনাজাতের স্বফক্ষে স্পষ্ট বিদ্যমান। এমতাবস্থায় প্রচলিত এ মুনাজাতকে বিদ‘আত বলা হঠকারিতা বৈ কি? নিম্নে মুনাজাতের স্বফক্ষে আল্লাহ তাআলার নির্দেশাবলী, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস সমূহ, ফিকহের কিতাব সমূহের বর্ণনা এবং হাদীস বিশারদগণের রায় সংক্ষিপ্ত দলীল সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করা হল ।




♣◘♦ মুনাজাতের স্বপক্ষে কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহ ♦◘♣

► নামাযের পর মুনাজাত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ:

عن الضحاک فإذا فرغت قال من الصلاۃ المکتوبۃ، وإلی ربک فارغب، قال في المسئلۃ والدعاء۰ (الدر المنثور : ۶/۳۶۵)

১। হযরত যাহ্‌হাক (রাঃ) সূরা ইনশিরাহ তথা আলাম নাশরাহ এর উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, যখন তুমি ফরজ নামায থেকে ফারেগ হবে তখন আল্লাহর দরবারে দু‘আতে মশগুল হবে। (তাফসীরে দূররে মানছূর : ৬/৩৬৫)

إذا فرغت من الصلاۃ المکتوبۃ فانصب في الدعاء۰ (تفسیر ابن عباس : ۵۱۴)

২। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, “যখন তুমি ফরজ নামায হতে ফারেগ হও, তখন দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ), ৫১৪ পৃঃ)

قال ابن عباس وقتادۃ والضحاک ومقاتل والکلبي : إذا فرغت من الصلاۃ المکتوبۃ أو مطلق الصلاۃ فانصب إلی ربک والدعاء، وار غب إلیہ في المسئلۃ۰
(تفسیر مظہري : ۱/۲۹۴)

৩। হযরত কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী (রাঃ) হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন-‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দু‘আয় লিপ্ত হবে’। (তাফসীরে মাযহারী, ১০/২৯৪ পৃঃ)

عن ابن عباس عن النبي صلی اللہ علیہ وسلم إن اللہ تعالی قال : یا محمد! إذا صلیت فقل : اللہم إني أسئلک فعل الخیرات وترک المنکرات وحب المساکین۰
(رواہ الترمذي : ۲/۱۵۹ الحدیث ۳۲۴۹)

৪। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাকীদ করে বলেছেন যে, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি নামায থেকে ফারিগ হবেন তখন এ দু‘আ করবেন, হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক কামনা করছি এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি....। (তিরমিযী শরীফ : ২/১৫৯ হাঃ নং ৩২৪৯)

আল্লাহ তা’আলার এ সমস্ত নির্দেশ দ্বারা বুঝা গেল যে, ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুসল্লীদের জন্য দু‘আ ও মুনাজাতে মশগুল হওয়া কর্তব্য, চাই তারা সম্মিলিতভাবে করেন বা প্রত্যেকে আলাদাভাবে করেন। তবে একই সময় আলাদাভাবে করলেও তা সম্মিলিত মুনাজাতের রূপ ধারণ করবে, যা অস্বীকার করা যায় না।

► হাদীস শরীফ ও কুরআনে পাকের ব্যাখ্যা :

কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের হুকুম আহকামের ব্যাখ্যা ও বাস্তব নমুনা উম্মতের সামনে পেশ করবেন, এটা তার নবুওয়াতের দায়িত্ব। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

وَاَنْزَلْنَا اِلَیْک الذِّکْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَانُزِّلَ اِلَیْہِمْ وَلَعَلَّہُمْ یَتَفَکَّرُوْنَ

আর আমি আপনার উপর কুরআন অবতির্ণ করেছি যাতে আপনি লোকদের সামনে তাদের উপর নাযিলকৃত বিষয়গুলোকে স্পষ্ট বর্ণনা করেন এবং তারা চিন্তা-ভাবনা করে।

এই আয়াতের আলোকে এখন আমাদের দেখতে হবে যে, কুরআনে কারীমের উক্ত আয়াতের উপর তিনি নিজে কিভাবে আমল করেছেন এবং হাদীস শরীফের মধ্যে উম্মতকে কিভাবে আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

► নামাযের পর মুনাজাত সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল:

১। হযরত মুগীরা বিন শু’বা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী আলাইহিস সালাম স্বীয় নামাযের শেষে দু‘আ করতেন। (ইমাম বুখারী (রহ) তারীখে কাবীরঃ ৬/৮০)

عن أنس رض کان النبي صلی اللہ علیہ وسلم إذا انصرف من الصلاۃ یقول : اللہم اجعل خیر عمري أخرہ وخیر عملي خاتمہ، وخیر أیامي یوم ألقاک۰
(رواہ الطبراني في الأوسط : ۱/۱۸۷الحدیث ۹۴۱۱)

২। হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায থেকে ফারেগ হতেন তখন এ দু‘আ করতেন। হে আল্লাহ! আমার জীবনের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কর শেষ জীবনকে এবং আমার আমলের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কর শেষ আমলকে এবং আমার দিন সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মনোরম কর তোমার সাথে সাক্ষাতের দিনকে।(তাবারানী আউসাত: ১০/১৮৭ হাঃ নং ৯৪১১)

 عن أبي بکرۃ رض فی قول اللہم إني أعوذبک من الکفر والفقر وعذاب النار کان النبي صلی اللہ علیہ وسلم یدعو بہن دبر کل صلاۃ۰
(رواہ النساءي : ۱۵۱ الحدیث ۵۴۶۵)

৩। হযরত আবু বকরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আ করতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফর, অভাব অনটন এবং দোযখের আযাব থেকে মুক্তি চাই।”(নাসাঈ শরীফ : ১/১৫১ হাঃ নং ৫৪৬৫)

عن زید بن أرقم سمعت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم یدعو في دبر کل صلاۃ اللہم بنا ورب کل شيء۰ (رواہ أبو داود : ۱/۲۱۱ الحدیث ۱۵۰۸)

৪। হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আ করতে শুনতাম, হে আল্লাহ যিনি আমাদের প্রতিপালক এবং প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক।(আবু দাউদ : ১/২১১ হাঃ নং ১৫০৮)

حدثنا محمد بن یحي الأسلمي قال : رأیت عبد اللہ بن الزبیر ورأي رجلا رافعا یدیہ یدعو قبل أن یفرغ من صلاتہ فلما فرغ منہ۰ قال لہ إن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم لم یکن یرفع یدیہ حتی یفرغ من صلاتہ ۰۰۰ (إعلاء السنن : ۳/۱۶۱)

৫। হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, ‘আমি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাম ফিরানোর পূর্বে হাত তুলে মুনাজাত করতে দেখে তার নামায শেষ হওয়ার পর তাকে ডেকে বললেন, ‘রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল নামায শেষ করার পরই হস্তদ্বয় উত্তোলন করে মুনাজাত করতেন; আগে নয়।’ (ই’লাউস সুনান, ৩/১৬১)

عن السائب بن یزید عن أبیہ أن النبي صلی اللہ علہ وسلم کان إدا دعا فرفع یدیہ مسح وجہہ بیدیہ۰ (رواہ أبو داود : ۱/۲۰۹الحدیث ۱۴۹۲)

৬। হযরত সায়িব বিন য়াযীদ (রাঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দু‘আ করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন এবং দু‘আ শেষে হস্তদ্বয়কে চেহারায় মুছতেন।(আবু দাউদ শরীফ ১/২০৯ হাঃ নং ১৪৯২)

عن أبي موسی الأشعري أنہ قال : دعا النبي صلی اللہ علیہ وسلم ثم رفع یدیہ ورأیت بیاض إبطیہ۰ رواہ البخاري : ۲/۹۳۸ الحدیث

৭। হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আর জন্য উভয় হাত উত্তোলন করেন। যদ্দরুন আমি তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখতে পাই।(বুখারী শরীফ ২/৯৩৮ হাঃ নং ৬৩৪১)

عن عمر بن الخطاب کان رسول اللہ صلی اللہ علہ وسلم إذا رفع یدیہ في الدعاء لم یحطہما حتی یمسح بہما وجہہ۰ (رواہ البخاري : ۲/۱۷۶ الحدیث ۶۳۴۱)

৮। হযরত উমর ফারুক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু‘আর জন্য যখন হাত তুলতেন তখন চেহারায় মুছার পূর্বে হাত নামাতেন না।(বুখারী শরীফ ২/১৭৬ হাঃ নং ৬৩৪১)

এ সকল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর মুনাজাত করতেন, চাই ফরজ হোক বা নফল এবং মুনাজাত করার সময় দু‘আর আদব হিসাবে উভয় হাত তুলতেন এবং শেষে উভয় হাত চেহারার মধ্যে মুছতেন। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এরূপ আমল করতেন তাহলে সাহাবাগণও (রাঃ) এ আমল করতেন। কারণ, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল ও নির্দেশ-এর পরে সাহাবাগণ তার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারেন না।

► নামাযের পর মুনাজাত সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ:

    عن معاذ بن جبل رض أن النبي صلی اللہ علیہ وسلم قال لہ أوصیک یا معاذ! لا تدعن أن تقول دبر کل صلاۃ، اللہم أعني علی ذکرک وشکرک وحسن عباد تک۰
    (رواہ النساءي : ۱/۱۴۶، وأبو داود : ۱/۲۱۳ الحدیث ۱۵۲۲)

১। হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হে মু’আয! আমি তোমাকে ওসীয়াত করছি যে, প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আ পড়াকে তুমি কখনো ছাড়বে না-হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জিকির, শোকর এবং উত্তম ইবাদত করার জন্য সাহায্য কর।(নাসাঈ শরীফ ১/১৪৬, আবু দাউদ শরীফ ১/২১৩ হাঃ নং ১৫২২)

    عن أنس رض عن النبي صلی اللہ علیہ وسلم قال : قل بعد صلاۃ بعد ما ترفع یدک : اللہم إلہي إلہ إبراہیم۰ (ابن السني في عمل الیوم واللیلۃ : ۶۱ ضعیف ۱۳۸)

২। হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নির্দেশ করেন যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর হাত উঠিয়ে এ দু‘আ করবে হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর মাবূদ।(ইবনুছ ছুন্নী : ৬১)

    عن أبي أمامۃ الباہلي قال قیل یا رسول اللہ! أي الدعاء أسمع؟ قال : جوف اللیل الأخر ودبر الصلوات المکتوبۃ۰ رواہ الترمذي : ۱/۰۸۷ وکذا۰
    ( وابن ماجۃ : ۹۳ الحدیث ۳۴۹۹)

৩। হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন দু‘আ কবূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী? ইরশাদ হলো, শেষ রাত্রে (তাহাজ্জুদের পর) এবং ফরজ নামায সমূহের পরে। (তিরমিযী শরীফ পৃঃ ১/৮৭ হাঃ নং ৩৪৯৯)

    عن المطلب قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : صلاۃ اللیل مثنی مثنی، وتشہد في کل رکعتین، وتبائس وتمسکن، وتقنع وتقول اللہم اغفر لي فمن لم یفعل ذلک فہو خداج۰ (رواہ ابن ماجۃ : ۹۳، ورواہ أیضا أبو داود : الحدیث ۱۲۹۶)

৪। হযরত মুত্তালিব (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রাত্রের নামাযে দু-দু রাকাআতের পর বসবে, এবং প্রত্যেক দু রাকাআতের পর তাশাহহুদ পড়বে এবং নামাযের মধ্যে নিজের নিঃস্বতা এবং বিনয়ীভাব প্রকাশ করবে। তারপর নামায শেষে দু হাত উঠাবে এবং দু‘আ করবে, হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দাও। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার নামায অসম্পন্ন থাকবে।(আবু দাউদ শরীফ : ১/১৮৩, ইবনে মাজাহ শরীফ পৃঃ ৯৩ হাঃ নং ১২৯৬)

    عن فضل بن عباس قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم الصلاۃ مثنی مثنی تشہد في کل رکعتین وتخشع وتضرع وتمسکن وتقنع یدیک یقول ترفعہما إلی ربک مستقبلا بطونہما وجہک وتقول : یارب! یا رب! فمن لم یفعل ذلک فہو کذا
    (رواہ الترمدی الحدیث ۳۷۵)

৫। হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নামায দুই দুই রাক’আত; প্রত্যেক দুই রাক’আতে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয়। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতার সহিত বিনত হয়ে নামায আদায় করতে হয়। আর (নামায শেষে) দু’হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত প্রভু পানে উঠিয়ে চেহারা কিবলামুখী করবে। অতঃপর বলবে-প্রভু হে! প্রভু হে! যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী। (তাঁর নামায অঙ্গহীন সাব্যস্থ হবে)। (তিরমিযী শরীফ : ১৮৭ হাঃ নং ৩৮৫)

    عن عبد اللہ بن عباس رض قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم إذا فرغت من الدعاء فامسح بیدیک وجہک۰ (رواہ ابن ماجۃ : ۲۷۵، وأبو داود : ۱/۲۰۹ الحدیث ۱۴۹۲)

৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, দু‘আ করার তরীকা হল যে তুমি উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলবে।(আবু দাউদ শরীফ : ১/২০৯ হাঃ নং ১৪৯২ )

    عن ابن عباس أن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم قال : المسئلۃ أن ترفع یدیک حذو منکبیک۰ (رواہ أبو داود : ۱/۲۰۹ الحدیث ۱۴۸۹ صیحح)

৭। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, যখন তুমি দু‘আ শেষ করবে তখন উভয় হাতকে চেহারার মধ্যে মুছবে। (ইবনে মাজা : ২৭৫ হাঃ নং ১৪৮৯)

    عن سلمان رض قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : ما رفع قوم أکفہم إلی اللہ تعالی یسألونہ شیئا إلا کان حقا علی اللہ أن یضع فی أیدیہم الذي سألوا۰ رواہ الطبر انی في الکبیر : ۶/۲۵۴ الحدیث ۶۱۴۲

৮। হযরত সালমান (রাঃ) বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন জামাআত কিছু প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুললে আল্লাহ তাআলার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় তাদের প্রার্থিত বস্তু তাদের হাতে তুলে দেয়া। (তাবারানী কাবীর : ৬/২৫৪ হাঃ নং ৬১৪২)

    عن سلمان رض قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم : إن ربکم حي کریم یستحي أن یرفع العبد یدیہ فیردہما صفرا۰
    (رواہ أبو داؤد عن سلمان ۱/۷۰۹ برقم ۱۴۸۸)

৯। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভূ অত্যন্ত লাজুক, এবং দয়ালু। কোন বান্দা তার হাত দুটি উঠিয়ে মুনাজাত করলে তার হাত খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। (আবু দাউদ হাঃ নং ১৪৮৮)

    ما من عبد مؤمن بسط کفیہ في دبر کل صلاۃ ثم بقول : اللہم إلہي۰۰۰(۰
    (ابن السنی فی عمل الیوم ۱۳۸)

১০। হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর দু’হাত তুলে এ দু‘আ পড়বে- “আল্লাহুম্মা ইলাহী ......... “আল্লাহু তা’আলা নিজের উপর নির্ধারিত করে নিবেন যে, তার হস্তদ্বয়কে বঞ্চিত ফেরত দিবেন না।(ইবনুস সুন্নী হাঃ নং ১৩৮)

    عن حبیب ابن مسلمۃ ۔۔۔ قال سمعت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم یقول : لا یجتمع ملأفیدعو بعضہم ویؤمن البعض إلا أجابہم اللہ ۔۔۔
    رواہ الحاکم فی مستدرکہ : ۳/۳۴۷ الحدیث ۵۴۷۸

১১। হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন “যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দু‘আ করে যে, তাদের একজন দু‘আ করতে থাকে, আর অপররা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের দু‘আ অবশ্যই কবুল করে থাকেন।’(তালখীসুয যাহাবী, ৩:৩৪৭ পৃঃ, মুস্তাদ্‌রাকে হাকেম : হাঃ নং ৫৪৭৮)

    عن ثوبان عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم لا یحل لامرإ أن ینظر فی جوف بیت امرء حتی یستأذن، فإن نظر فقد دخل ولا یؤم قوما فیخص نفسہ بدعوۃ دونہم فإن فعل فقد خانہم ولا یقوم إلی الصلاۃ وہو حقن (رواہ الترمذي : ۱/۸۲ الحدیث ۳۵۷)

১২। হযরত ছাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দু‘আতে কেবল নিজেকেই নির্দিষ্ট করে। যদি এরূপ করে, তবে সে তাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করল।”(তিরমিযী শরীফ : ১:৮২ হাঃ নং ৩৫৭)

এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম সাহেব সকল মুসল্লীদের সঙ্গে নিয়ে সকলের জন্য দু‘আ করবেন। নতুবা তিনি খিয়ানতকারী হবেন।

► উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা যায়ঃ

(ক) ফরজ নামাযের পর দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা। তাই ফরজ নামাযের পর সকলের জন্য দু‘আয় মশগুল হওয়া বাঞ্ছণীয়।

(খ) নামাযের পর হাত তুলে দু‘আ করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নামাযের পর দু‘আয় হাত উঠাতেন এবং মুনাজাত শেষে উভয় হাত চেহারার মধ্যে মুছতেন এবং অন্যদেরকে এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। সুতরাং এটাই দু‘আর আদব। আর এ কথা তো হতেই পারে না যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের পর হাত তুলতেন কিন্তু সাহাবা (রাঃ) গণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করে হাত তুলতেন না।

(গ) একজন দু‘আ করবে; আর অন্যরা সবাই আমীন বলবে; এভাবে সকলের দু‘আ বা ‘সম্মিলিত মুনাজাত’ কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আর ইমাম সাহেব শুধু নিজের জন্য দু‘আ করবেন না। দু‘আতে মুসল্লীদেরকে শামিল করবেন। নতুবা তিনি খিয়ানতকারী সাব্যস্ত হবেন।

(ঘ) উল্লেখিত হাদীস সমূহের সমষ্টিগত বর্ণনা দ্বারা নামাযের পর একাকী মুনাজাতের পাশাপাশি ফরজ নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের সম্মিলিত মুনাজাতের প্রমাণ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। অতএব, তা মুস্তাহাব হওয়াই হাদীস সমূহের মর্ম ও সমষ্টিগত সার কথা। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ কিফায়াতুল মুফতী, ৩:৩০০ পৃঃ, ইলাউস সুনান ৩:১৬১ পৃঃ/ইমদাদুল ফাতাওয়া ১:৭৯৬)

► মুনাজাতের স্বপক্ষে হাদীস বিশারদগণের রায়ঃ

    ১। জগত বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, “যে সকল নামাযের পর সুন্নাত নামায নেই, সে সকল ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুক্তাদীগণ আল্লাহর যিকিরে মশগুল হবেন। অতঃপর ইমাম কাতারের ডান দিকে মুখ করে দু‘আ করবেন। তবে সংক্ষিপ্তভাবে মুনাজাত করতে চাইলে কিবলার দিকে মুখ করেও করতে পারেন।” (ফাতহুল বারী ২: ৩৯০পৃঃ)

    وأما الصلاۃ التي لایتطوع بعدہا فیتشاغل الإمام ومن معہ بالذکر الماثور ولا یتعین لہ مکان بل إن شاء وا انصرفوا وذکروا وإن شاء وا مکثوا وذکروا، وعلی الثاني إن کان للإمام عادۃ أن یعلمہم أو یعظہم فیستحب أن یقبل علیہم بوجہہ جمیعا وإ کان لا یزید علی الذکر المأثور۰ فہل یقبل علیہم جمیعا أو یتفتل فیجعل یمینہ من قبل المأمو مین ویسارہ من قبل القبلۃ ویدعو الثاني ہو الذی جزم بہ أکثر الشافعیۃ، ویحتمل ان قصر زمن ذلک ان یستمر مستقبلا للقبلۃ (فتح الباری : ۲/۳۹۰)

    ২। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাদাতা আল্লামা বদরুদ্দীন ’আইনী (রহঃ) বলেন,“এ হাদীস দ্বারা নামাযের পরে মুনাজাত করা মুস্তাহাব বুঝা যায়। কারণ-সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা।” (উমদাতুল ক্বারী ৬:১৩৯ পৃঃ)

    ومن فوائد الحدیث ۔۔۔ منہا : فضل الذکر عقیب الصلاۃ بأنہا أوقات فاضلۃ ترجی منہا إجابۃ الدعاء (عمدۃ القاري : ۴/۶۱۳)

    ৩। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, ‘নামাযের পরে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা বিদ‘আত নয়। কারণ-এ ব্যাপারে প্রচুর কাওলী রিওয়ায়াত বিদ্যমান। আমলী রিওয়ায়াতের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মধ্যে এ মুনাজাত করেছেন’ বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এটাই সকল মুস্তাহাবের নিয়ম। তিনি নিজে মুনাসিব মত আমল বেছে নিতেন, আর অবশিষ্ট মুস্তাহাবসমূহের ব্যাপারে উম্মতদেরকে উৎসাহ দিতেন। সুতরাং এখন যদি আমাদের কেউ নামাযের পরে হাত উঠিয়ে দায়িমী (স্থায়ী) ভাবে মুনাজাত করতে থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি এমন একটা বিষয়ের উপর আমল করল, যে ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহ দিয়ে গেছেন। যদিও তিনি নিজে সর্বদা আমল করেননি।”(ফাইযুল বারী, ২:১৬৭ পৃঃ ও ৪৩১ পৃঃ/৪:৪১৭ পৃঃ)

    ۔۔۔لا أن الرفع بدعۃ فقد ہدي إلیہ في قولیات کثیرۃ، وفعلہ بعد الصلاۃ قلیلا، وہکذا شانہ في باب الأذکار والأوراد اختارہ صلی اللہ علیہ وسلم لنفسہ ما اختار اللہ لہ صلی اللہ علیہ وسلم وبقي أشیاء رغب فیہا الأمۃ، فإن التزم أحد منا الدعاء بعد الصلاۃ برفع الید فقد عمل بما رغب فیہ وإن لم یکثرہ لنفسہ، فاعلم ذلک۰
    (فیض الباري : ۲/۱۶۷)

    ৪। কুতুবুল আলম শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া (রহঃ) বললেন,“ফরজ নামাযের পরে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাকে কিছু লোক অস্বীকার করে থাকে। কিন্তু তা ঠিক নয়। কারণ-এর ব্যাপারে প্রচুর হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। এ সকল হাদীস দ্বারা নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়”। (আল-আবওয়াব ওয়াত-তারাজিম ৯৭ পৃঃ)

    ৫। সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্‌নূরী (রহঃ) মুনাজাত সম্পর্কিত হাদীসসমূহ উল্লেখ পূর্বক বলেন, “মুনাজাত অধ্যয়ে যে সকল হাদীস পেশ করা হল, এগুলোই যথেষ্ট প্রমাণ যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়িয। এ হাদীস সমূহের ভিত্তিতেই আমাদের ফুক্বাহা কেরাম উক্ত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলেছেন।(মা’আরিফুস সুনান : ৩:১২৩ পৃঃ)

    فہذہ وما شاکلہا من الروایات في الباب تکاد تکفي حجۃ لما اعتادہ الناس فی البلاد من الدعوات الاجتماعیۃ دبر الصلوات۰۰۰(معارف السنن : ۳/۱۲۳)

    ৬। মুসলিম শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন, “সকল ফরজ নামাযের পরে ইমাম, মুক্তাদী ও মুনফারিদের জন্য দু‘আ করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।” (শারহে মুহাযযাব লিন-নাওওয়াবী ৩:৪৬৯)

    قد ذکرنا استحباب الذکر والدعاء للإمام والمأموم والمنفرد وہو مستحب عقب کل الصلوات بلا خلاف۔۔۔ ۰ (شرح المہذب للنووي : ۳/۴۶۹)

    ৭। প্রখ্যাত হাদীস সংকলক হযরত মাওলানা জাফর আহমাদ উসমানী (রহঃ) বলেন, “আমাদের দেশে যে সম্মিলিত মুনাজাতের প্রথা চালু আছে যে, ইমাম সাহেব নামাযের পর কেবলামুখী বসে দু‘আ করে থাকেন, এটা কোন বিদ‘আত কাজ নয়। বরং হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। তবে ইমামের জন্য উত্তম হলো-ডানদিক বা বামদিকে ফিরে মুনাজাত করা।”(ই’লাউস সুনান ৩:১৬৩, ৩:১৯৯ পৃঃ)

    তিনি আরো বলেন, “হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। যেমন- আমাদের দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রচলিত আছে।” (ঐ ৩:১৬৭ পৃঃ, ৩:২০৪)

    এর পর তিনি নামাযের পর মুনাজাত অস্বীকারকারীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। (৩: ২০৩)

    قلت والحاصل أن ما جرئ بہ العرف في دیارنا من أن الإمام یدعو فی دبر بعض الصلواش مستقبلا للقبلہ لیس ببد عۃ بل لہ أصل فی السنۃ، وإن کان الأولی أن ینحرف الإمام بعد کل صلاۃ یمینا أو یسارا ۔۔۔۰ (إعلاء السنن : ۳/۱۹۹)

    তেমনিভাবে ফকীহুন নফ্‌স হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ গাংগুহী (রাহঃ)ও মুনাজাত অস্বীকারকারীদের সমালোচনা করেছেন।(আল কাওকাবুদ্দুররী- ২ : ২৯১)

◘ মুহাদ্দিসীনে কিরামের বর্ণিত এ রায়সমূহ দ্বারা বুঝা গেলঃ

    (ক) সকল নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার খুবই সম্ভাবনা।

    (খ) মুনাজাত ইমাম-মুক্তাদী; মুনফারিদ সকলের জন্যই মুস্তাহাব আমল।

    (গ) ফরয নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের ইজতিমায়ী মুনাজাত করা মুস্তাহাব।

    (ঘ) ফরয নামাযের পর মুস্তাহাব মনে করে দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও কোন ক্ষতি নেই।

    (ঙ) নামাজের পর মুনাজাত কোন ক্রমেই বিদ‘আত নয়। বহু কাওলী হাদীস দ্বারা এ মুনাজাত ছাবেত আছে। মুস্তাহাব আমল হেতু রাসুল (সাঃ) নিজে যদিও তা মাঝে মধ্যে করেছেন, কিন্তু সকলকে তিনি এর প্রতি মৌখিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন।

    (চ) প্রচলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলা বা বিরোধিতা করা হঠকারিতার শামিল। প্রচলিত মুনাজাত মুস্তাহাব। সকল মাযহাবেই এ মুনাজাত মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়েছে।”

    (প্রমাণের জন্য হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওঃ আশরাফ আলী থানবী (রহঃ)এর প্রসিদ্ধ ফাতওয়া দ্রষ্টব্য পৃঃ ১/৭৯৬)

ফরজ নামাজরে পর মুনাজাত

ফরজ নামাজের পরে মুনাজাত

► মুনাজাতের স্বপক্ষে ফিকহের কিতাবসমূহের দলীলঃ

    ফিকহের কিতাবসমূহে মুনাজাতের স্বপক্ষে বহু প্রামণ পাওয়া যায়। নিম্নে তার কিয়দাংশ উদ্ধৃত হলঃ

    (۱) قال في شرعۃ الإسلام : ویغتنم أي المصلي الدعاء بعد المکتوبۃ
    (۲) في مفاتیح الجنان : قولہ بعد المکتوبۃ أي قبل السنۃ، کذا في السعایۃ
    (۳) في نور الإیضاح وشرحہ المسمی بإمداد الفتاح ثم بعد الفراغ عن الصلاۃ یدعو الإمام لنفسہ وللمسلمین رافعي أیدیہم حذو الصدور وبطونہا مما یلی الوجہ بخشوع وسکون ثم یمسحون بہا وجوہہم في اخرہ ای عند الفراغ من الدعاء۰ انتہی۰ کذا في التحفۃ المرغوبۃ والسعایۃ۰

    (۴) قد أجمع العلماء علی استحباب الذکر والدعاء بعد الصلاۃ وجائت فیہ أحادیث کثیرۃ۰ انتہی (تہذیب الأذکار للرملي کذا في التحفۃ المرغوبۃ)
    (۵) ۔۔۔ أي اذکروا اللہ تعالی وادعوا بعد الفراغ من الصلاۃ۰
    (فتاوي صوفیہ کذا في التحفۃ)
    (۶) إن الدعاء بعد الصلاۃ المکتوبۃ مسنون وکذا رفع الیدین ومسح الوجہ بعد الفراغ۰ (منہج العمال والعقائد السنیۃ کذا في التحفۃ) بحوالہ کفایت المفتي : ۳/

    ১। ফিকহে হানাফীর অন্যতম মুল কিতাব ‘মাবসুত’-এর বর্ণনাঃ ........“যখন তুমি নামায থেকে ফারিগ হবে, তখন আল্লাহর নিকট দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে। কেননা-এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।”

    ২। প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব ‘মিনহাজুল উম্মাল ও আকায়িদুছ ছুন্নিয়্যাহ এর বর্ণনাঃ “ফরজ নামাযের পর দু‘আ করা সুন্নত। অনুরূপভাবে দু‘আর সময় হাত উঠানো এবং পরে হাত চেহারায় মুছে নেয়াও সুন্নত।”

    ৩। .......‘আততাহজীবুল আজকার’-এর বর্ণনা,“এ কথার উপর উলামাগণের ইজমা হয়েছে যে, নামাযের পর যিকর ও দু‘আ করা মুস্তাহাব।”

    ৪। ..........‘শির’আতুল ইসলাম’ এর বর্ণনা, “ফরয নামাযের পর মুসল্লীরা দু‘আ করাকে গণীমত মনে করবে।”

    ৫। .........‘তুহফাতুল মারগুবা’ ও ‘সি’আয়া’-এর বর্ণনাঃ “নামাজ শেষে ইমাম ও মুসল্লীগণ নিজের জন্য এবং মুসলমানদের জন্য হাত উঠিয়ে দু‘আ করবেন। অতঃপর মুনাজাত শেষে হাত চেহারায় মুছবেন।” (তুহ্‌ফা পৃঃ ১৭)

    ৬। ........... ‘ফাতাওয়া বাজ্জাজিয়া’-এর বর্ণনাঃ নামায শেষে ইমাম প্রকাশ্যভাবে হাদীসে বর্ণিত দু‘আ পড়বেন এবং মুসল্লীগণও প্রকাশ্য আওয়াজে দু‘আ পড়বেন। এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে মুসল্লীদের দু‘আ ইয়াদ হয়ে যাওয়ার পর সকলে বড় আওয়াজে দু‘আ করা বিদ‘আত হবে। তখন মুসল্লীগণ দু‘আ আস্তে পড়বেন।

    ৭। ‘নূরুলঈযাহ’-এর বর্ণনাঃ “নামাযের পরে জরুরী বা ওয়াজিব মনে না করে হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর নিকট দু‘আ করা মুস্তাহাব।”(নূরুল ঈযাহ পৃঃ ৮২)

    উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ দ্বারা স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হলো যে, নামাযের পর দু‘আ করা মুস্তাহাব। আর তা বিভিন্ন হাদীসে দু‘আর আদব হিসাবে হাত উঠাতে উৎসাহিত করার আলোকে হাত উঠিয়ে করা বাঞ্ছনীয়। আরো প্রমাণিত হল যে, মুনাজাত করা ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্যই পালনীয় মুস্তাহাব আমল।

► পরিশিষ্ট:

    এ সকল বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের জন্য ওয়াজিব মনে না করে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ মুনাজাতকে বিদ‘আত বলার কোন যুক্তি নেই। কারণ-বিদ‘আত বলা হয় সেই আমলকে, শরীয়তে যার কোনই অস্তিত্ব নেই। আর মুনাজাত সেই ধরনের মূল্যহীন কোন আমল নয়। তবে যেহেতু মুনাজাত ‘মুস্তাহাব আমল’, তাই এটাকে জরুরী বা ওয়াজিব মনে করা এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ।

    অতএব, কেউ মুনাজাতের ব্যাপারে যদি এমন জোর দেয় যে, মুনাজাত তরককারীকে কটাক্ষ বা সমালোচনা করতে থাকে, বা মুনাজাত না করলে তার সাথে ঝগড়া-ফাসাদ করতে থাকে তাহলে তারা যেহেতু মুস্তাহাবকে ফরজে পরিণত করছে সুতরাং সেরূপ পরিবেশে মুনাজাত করা মাকরূহ। মুনাজাত মাকরূহ হওয়ার এই একটি মাত্র দিক আছে। আর এটা শুধু মুনাজাতের বেলায় নয়, বরং সমস্ত মুস্তাহাবেরই এ হুকুম; মুস্তাহাব আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে, ঝগড়া বিবাদ শুরু করলে তা নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে। অতএব, মুনাজাতও পালন করতে হবে এবং বিদ‘আত থেকেও বাঁচতে হবে। আর এর জন্য সুষ্ঠু নিয়ম আমাদের খেয়াল মতে এই যে, মসজিদের ইমাম সাহেবান মুনাজাতের আমল জারী রেখে মুনাজাত সম্পর্কে মুসল্লীগণকে ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে বুঝাবেন এবং ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নাত-মুস্তাহাবের দরজা ও মর্তবা (ব্যবধান) বুঝিয়ে দিয়ে বলবেন, সালামের পর ইমামের ইকতিদা শেষ হয়ে যায়। ইমাম ছাহেব মুস্তাহাব আমল হিসাবে মুনাজাত করতে পারেন, কোন জরুরী কাজ থাকলে মুনাজাত নাও করতে পারেন। তেমনিভাবে মুসল্লীগণের জন্য ইমামের সাথে মুনাজাতে শরীক হওয়া উত্তম, যদি কোন মুসল্লীর জরুরী কাজ থাকে তাহলে তিনি সালাম বাদ ইমামের সাথে মুনাজাতে শামিল নাও হতে পারে। বা মুনাজাত করা যেহেতু মুস্তাহাব, সুতরাং যার সুযোগ আছে, সে মুস্তাহাবের উপর আমল করে নিবে। আর যার সুযোগ নেই; তার জন্য মুস্তাহাব তরক করার অবকাশ আছে। এমন কি কেউ যদি ইমামের সাথে মুনাজাত শুরু করে, তাহলে ইমামের সাথে শেষ করা জরুরী নয়। কারণ সালাম ফিরানোর পর ইকতিদা শেষ হয়ে যায়। সুতরাং কেউ চাইলে, ইমামের আগেই তার মুনাজাত শেষ করে দিতে পারে। আবার কেউ চাইলে, ইমামের মুনাজাত শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ একা একা মুনাজাত করতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা শরী‘আতে নিষেধ। এভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পর ইমাম সাহেবান প্রত্যেক ফরয নামাযের পর দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও তাতে কোন ক্ষতি নেই। অনেকের ধারণা মুস্তাহাব আমল দায়েমীভাবে করলে তা বিদ‘আত হয়ে যায়। সুতরাং ‘মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মাঝে মাঝে তরক করতে হবে।’ তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা (রাঃ) দায়িমীভাবে চাশতের নামায পড়তেন। কখনও পরিত্যাগ করতেন না। উপরস্তু তিনি বলতেন, “চাশতের নামাযের মুহূর্তে আমার পিতা-মাতা জীবিত হয়ে এলেও আমি তাদের খাতিরে এ নামায পরিত্যাগ করব না। (মুয়াত্বা মালেক পৃঃ ১১৬, হাঃ নং ১৯১) অথচ চাশতের নামায মুস্তাহাব পর্যায়ের। হযরত আয়িশা (রাঃ) দায়েমীভাবে পড়ার কারণে কি তা বিদ‘আত বলে গণ্য হয়েছিল? কখনোই নয়। তেমনিভাবে মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মাঝে মধ্যে তরক করার কোন আবশ্যকীয়তা নেই। যেমন-সকল ইমামই টুপি পরে, জামা পরে নামায পড়ান। কেউ একথা বলেন না যে, মাঝে মধ্যে টুপি ছাড়া জামা ছাড়া নামায পড়ানো উচিত-যাতে মুসল্লীগণ বুঝতে পারেন যে টুপি পরা বা জামা পরা ফরজ-ওয়াজিব আমল নয়। তাহলে মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মুনাজাতকে কেন ছাড়া হবে? অতএব মাঝে মধ্যে মুনাজাত তরক করে নয়, বরং ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমেই মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারটি বুঝিয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত। এটাই অদ্ভুদ পরিস্থিতির উত্তম সমাধান। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে শরীয়তের সঠিক বিধান বুঝার এবং সুন্নাত মুতাবিক সহীহ আমল করার তাওফীক দান করুন-আমীন।

► মুনাজাতের সুন্নাত তরীকা:

    ১. মুনাজাতের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা।(তিরমিযী হাঃ নং- ৩৪৭৬)

    ২. উভয় হাত সিনা বরাবর উঠানো।(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাঃ নং - ৩২৩৪)

    ৩. হাতের তালু আসমানের দিকে প্রশস্ত করে রাখা।(রদ্দুল মুহতার : ১/৪৭৭, তাবারানী কাবীর হাঃ নং - ৩৮৪২)

    ৪. হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিক ফাঁক রাখা। (হিসনে হাসীন : ২৭)

    ৫. দু’হাতের মাঝখানে সামান্য ফাঁক রাখা। (ত্বহ্‌ত্বাবী টীকাঃ মারাকিল ফালাহ : ২০৫)

    ৬. মন দিয়ে কাকুতি-মিনতি করে দু‘আ করা। (সূরা আ‘রাফ : ৫৫)

    ৭. আল্লাহ তাআলার নিকট দু‘আর বিষয়টি বিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে বারবার চাওয়া। (বুখারী শরীফ হাঃ নং - ৬৩৩৮)

    ৮. নিঃশব্দে দু‘আ করা মুস্তাহাব। তবে দু‘আ সম্মিলিতভাবে হলে এবং কারো নামাযে বা ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশংকা না থাকলে সশব্দে দু‘আ করাও জায়িয আছে। (সূরা আরাফ : ২০৫, বুখারী শরীফ হাঃ নং - ২৯৯২)

    ৯. আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, যেমনঃ ‘সুব্‌হানা রাব্বিকা রাব্বিল ইয্‌যাতী’ শেষ পর্যন্ত পড়া; দরূদ শরীফ ও আমীন বলে দু‘আ শেষ করা। (তাবারানী কাবীর হাঃ নং - ৫১২৪, মুসান্নাফে আঃ রাজ্জাক হাঃ নং - ১১৭, আবু দাউদ হাঃ নং- ৯৮৩)

    ১০. মুনাজাতের পর হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল মুছে নেওয়া। (আবু দাউদ হাঃ নং - ১৪৮৫)

► মুনাজাত অস্বীকারকারীগণের কতিপয় অভিযোগ ও তার জাওয়াবঃ

(১)

    অভিযোগ-১ বর্ণিত হাদীসমূহ সম্পর্কে ফরয নামাযের পর মুনাজাত ভিত্তিহীন হওয়ার দাবীদারগণ আপত্তি তুলেন যে, ‘এ হাদীসমূহের কোন একটিতেও ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কথা উল্লেখ নেই। কেননা, এগুলোর কোনটিতে শুধু দু‘আর কথা আছে, কিন্তু হাত তোলার কথা নেই। আবার কোনটিতে শুধু হাত তোলার কথা আছে, কিন্তু তা একাকীভাবে, সম্মিলিতভাবে নয়। আবার কোনটিতে সম্মিলিত মুনাজাতের কথা আছে; কিন্তু ফরয নামাযের পরে হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অতএব, এ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রচলিত সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত হয় না!!

    জওয়াব - ১ তাদের অভিযোগের ভিত্তিই সহীহ নয়। কারণ শরীয়তে এমন কোন বিধান নেই যে, প্রত্যেকটা ইবাদতের সকল অংশ কোন একটা আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। নতুবা তা অগ্রহণযোগ্য হবে। তাদের এ আপত্তির জবাবে হযরত মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহঃ) মুফতী আজম হিন্দুস্তান “কিফায়াতুল মুফতী” গ্রন্থে বলেন- “বিষয়গুলো যেমন কোন এক হাদীসে একত্রিতভাবে উল্লেখিত হয়নি, তেমনি কোন হাদীসে তা নিষিদ্ধও হয়নি। কোন জিনিসের উল্লেখ না থাকার দ্বারা তা নিষিদ্ধ হওয়া বুঝায় না। সুতরাং এ কথা বলা যাবে না যে, এ সব হাদীস নামাযের পরের দু‘আর জন্য প্রযোজ্য নয় বরং উল্লেখিত হাদীসমূহের বর্ণনা ভাব এমন ব্যাপকতা সম্পন্ন, যা সম্ভাব্য সকল অবস্থাকেই শামিল করে। তা ছাড়া বিভিন্ন রিওয়ায়াতে এ অবস্থাগুলোর পৃথক পৃথক উল্লেখ রয়েছে-যার সমষ্টিগত সামগ্রিক দৃষ্টিকোণে ফরজ নামাযের পর হস্ত উত্তোলন পূর্বক সম্মিলিত মুনাজাত অনায়াসে ছাবিত হয়। এটা তেমনি, যেমন নামাযের বিস্তারিত নিয়ম, আযানের সুন্নত নিয়ম, উযূর সুন্নাত তরীকা ইত্যাদি একত্রে কোন হাদীসে বর্ণিত নেই। বিভিন্ন হাদীসের সমষ্টিতে তা ছাবিত হয়” তারপরেও তা সকল উলামাদের নিকট গ্রহণযোগ্য।(দেখুনঃ কিফায়াতুল মুফতী, ৩:৩০০ পৃঃ)

(২)

    অভিযোগ-২ নামাযের পর মুনাজাতের স্বপক্ষে হাদীসমূহ কেবল নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব, এর দ্বারা ফরয নামাযের পর মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়া প্রমাণিত হয় না।

    জওয়াব-২ বর্ণিত হাদীসসমূহের কয়েকটিতে ফরয নামাযের কথা উল্লেখ আছে। আর কয়েকটির মধ্যে “প্রত্যেক নামাযের পর” কথাটির উল্লেখ আছে। যার মধ্যে ফরয ও নফল সবই শামিল। সুতরাং এ প্রশ্নই অবান্তর। তাদের এ প্রশ্নের জওয়াবে হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, “নামাযের পর মুনাজাত করার পক্ষের হাদীসগুলোর ব্যাপারে ফিকাহবিদগণ নফল এবং ফরয উভয় নামাযকেই শামিল করেছেন।”   (ফাইযুল বারী, ৪:৪৭ পৃঃ)

    মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী (রহঃ) বলেন, “ফরজ নামাযের পর মুনাজাত নফল নামাযের অপেক্ষা উত্তম।” (ই’লাউস সুনান, ৩:১৬৭ পৃঃ)

    সুতরাং কিছুক্ষনের জন্য যদি মেনে নেয়া হয় যে, উক্ত হাদীসসমূহে নফল নামাযের পর মুনাজাত করতে বলা হয়েছে তাহলে উক্ত কথার দ্বারা ফরজ নামাযের পর মুনাজাত আরো উত্তমভাবে প্রমাণিত হবে। এ কারণে যে, নফল নামাযের পর দুআ কবূল হওয়ার কোন ঘোষণা করা হয় নাই, আর ফরয নামাযের পর দুআ কবূল হওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। তো যে ক্ষেত্রে কবুল হওয়ার ঘোষণা নেই, সে ক্ষেত্রে যদি দু‘আ ও মুনাজাত করতে হয় তাহলে যেখানে দু‘আ কবুল হওয়ার ঘোষণা আছে সেখানে অবশ্যই দু‘আ করা কর্তব্য। সুতরাং উক্ত অভিযোগ দ্বারা ফরয নামাযের পরে মুনাজাতকে অস্বীকার করা যায় না।

(৩)

    অভিযোগ-৩ মুনাজাত মুস্তাহাব হয়ে থাকলে, প্রচুর হাদীসে এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) হতে আমল ছাবিত থাকতো। অথচ এ ব্যাপারে একটি আমলী রিওয়ায়াতও ছাবিত নেই।

    জওয়াব-৩ প্রথমতঃ মুনাজাতের ব্যাপারে ‘রাসূল (সাঃ)-এর আমল সম্পর্কিত একটি রিওয়ায়াতও ছাবিত নেই’-এ কথাটি সম্পূর্ণ গলদ। কারণ এ প্রসঙ্গে অনেকগুলো স্পষ্ট রিওয়ায়াত দ্বারা আমরা রাসূল (সাঃ)-এর আমল অধ্যায়ে রাসূল (সাঃ)-এর মুনাজাত করার হাদীস বর্ণনা করেছি। দ্বিতীয়তঃ মুস্তাহাব আমল প্রমাণের জন্য রাসূল (সাঃ)-এর কওলী বা মৌখিক হাদীস যথেষ্ট, নবী কারীম (সাঃ)-এর আমল এর মাধ্যমে ছাবিত হওয়া মোটেই জরুরী নয়। কারণ-বহু মুস্তাহাব আমল এমন রয়েছে, যা রাসূলে পাক (সাঃ) বিশেষ হিকমতের কারণে বা সুযোগের অভাবে নিজে করতেন না, কিন্তু সে সবের প্রতি মৌখিকভাবে উম্মতদেরকে উৎসাহ দিতেন। যাতে উম্মত তা আমল করে নিতে পারে। যেমন তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায, চাশতের নামায, আযান দেয়া যাকে আফজালুল আ’মাল বলা হয়ে থাকে ইত্যাদি। এগুলো রাসূলে পাক (সাঃ) থেকে আমল করার মাধ্যমে ছাবিত নেই। অথচ তিনি এসব নেক কাজসমূহের প্রতি উম্মতকে মৌখিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহিত করে গিয়েছেন। সকল উলামায়ে কেরাম এগুলোকে মুস্তাহাব আমল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তদ্রুপ মুনাজাতের ব্যাপারে রাসূলে করীম (সাঃ) হতে আমলী রিওয়ায়াত স্বল্প বর্ণিত হলেও মৌখিক রিওয়ায়াত প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। অতএব, মুস্তাহাব প্রমাণ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।

    হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন, যারা বলে থাকেন যে, মুস্তাহাব প্রমান হওয়ার জন্য রাসূলে পাক (সাঃ)-এর মৌখিক বর্ণনার পাশাপাশি আমলও থাকতে হবে, তারা সঠিক সরল পথ থেকে দূরে সরে পড়েছেন এবং একটি ফাসিদ ও গলদ জিনিসের উপর ভিত্তি করে কথা বলেছেন। (দ্রষ্টব্যঃ ফাইযুল বারী, ২:৪৩১ পৃঃ)

(৪)


Balal Al Jaber



    অভিযোগ-৪ মুনাজাতের স্বপক্ষে যে সকল হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়, তার অনেকটাই জ’য়ীফ। অতএব, তা গ্রহণযোগ্য নয়।

    জওয়াব-৪ এ অধ্যায়ের অনেক সহীহ হাদীসের পাশাপাশি কিছু হাদীস জ’য়ীফ থাকলেও যেহেতু তার সমর্থনে অনেক সহীহ রিওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে, অতএব, তা নির্ভরযোগ্যই বিবেচিত হবে। দ্বিতীয়তঃ সেই হাদীসসমূহ ফজীলত সম্পর্কে। আর ফজীলতের ব্যাপারে জ’য়ীফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য।(দেখুনঃ আল আযকার লিন নববী পৃঃ ৭-৮, তাদরীবুর রাভী লিস সুয়ূতী পৃঃ ১৯৬, কিতাবুল মাউযূআত লি মুল্লা আলী ক্বারী পৃঃ ৭৩)

(৫)

    অভিযোগ-৫ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি ফরজ নামাযের পর যখন সালাম ফিরাতেন, তখন এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়তেন যে, মনে হতো-তিনি যেন উত্তপ্ত পাথরের ওপর উপবিষ্ট ছিলেন।(উমদাতুল কারী, ৬:১৩৯ পৃঃ)

    এতে বুঝা যায়, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) সালাম ফিরিয়ে মুনাজাত না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন।

    জওয়াব-৫ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর উল্লেখিত আমলের এ অর্থ নয় যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর মাসনুন দু‘আ-যিকর না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন। কেননা-তিনি রাসূলে পাক (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ কখনও করতে পারেন না। রাসূলে পাক (সাঃ) হতে সালাম ফিরানোর পর দু‘আ যিকর এর কথা প্রচুর হাদীসে বর্ণিত আছে। সুতরাং রিওয়ায়াতটির সঠিক মর্ম হল-হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) সালাম ফিরানোর পর সংক্ষিপ্ত দু‘আ-যিকর পাঠের অধিক সময় বসে থাকতেন না।

    অতএব, উল্লেখিত রিওয়ায়াত দ্বারা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর মুনাজাত করা ব্যতীত উঠে পড়া প্রমাণিত হয় না।(আল আবওয়াব ওয়াত তারাজিম, ৯৭ পৃঃ)

► তাম্বীহঃ

    যারা ফরজ নামাযের পরে সর্বাবস্থায় ইজতিমায়ী মুনাজাতের বিরোধী, তারা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর আমলের ভুল অজুহাত দেখিয়ে সালাম ফিরানোর পর দেরী না করেই সুন্নত ইত্যাদির জন্য উঠে পড়েন। অথচ এর দ্বারা নামাযের পর যে মাসনূন দু‘আ ইত্যাদি রয়েছে, তা তরক করা হয়। দ্বিতীয়তঃ ফরজ ও সুন্নাতের মাঝখানে কিছু সময়ের ব্যবধান করার যে হুকুম হাদীস শরীফে পাওয়া যায়, তাও লংঘন করা হয়। তাদের জন্য নিমোক্ত হাদীসটি বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্যঃ

    হাদীসঃ আবু রিমছা (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা আমি নবী কারীম (সাঃ)-এর সাথে নামায পড়তে ছিলাম। হযরত আবু বকর ও উমর (রাঃ) ঐ নামাযে উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রথম সারিতে নবী কারীম (সাঃ)-এর ডান পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিল, যে উক্ত নামাযে তাকবীরে উলা হতেই উপস্থিত ছিল। (অর্থাৎ সে মাসবুক ছিল না) নবী কারীম (সাঃ) নামায শেষ করে সালাম ফিরালেন এমনভাবে যে, উভয় দিকে আমরা তাঁর গন্ডদ্বয় দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) ঘুরে বসলেন। তখন ঐ তাকবীরে উলায় উপস্থিত ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পড়ল সুন্নাত নামায পড়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ হযরত উমর (রাঃ) লাফিয়ে উঠলেন এবং ঐ ব্যক্তির উভয় কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন-“বসে পড়! পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের (ধর্মীয়) পতন হয়েছে, যখন তারা (ফরজ ও সুন্নাত) নামাযের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করত না।” নবী কারীম (সাঃ) হযরত উমর (রাঃ)-এর এ কাজ দেখে দৃষ্টি উঠালেন এবং বললেন, “হে খাত্তাবের পুত্র! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পন্থী বানিয়েছেন।”(আবু দাউদ শরীফ হাঃ নং ১০০৫)

► তথ্যসূত্র

◘ তাফসীরগ্রন্থ

    ১. তাফসীরে দুররে মানছূর
    ২. তাফসীরে ইবনে আব্বাস
    ৩. তাফসীরে মাযহারী    

◘ হাদীসগ্রন্থ    

    ১. বুখারী শরীফ
    ২. নাসায়ী শরীফ
    ৩. আবু দাউদ শরীফ
    ৪. তিরমিযী শরীফ
    ৫. ইবনে মাজাহ শরীফ
    ৬. তারীখে কাবীর
    ৭. ই‘লাউস সুনান
    ৮. মুস্তাদরাকে হাকেম                                                                        
    ৯. তালখীসে যাহাবী                                  
    ১০. তাবারানী কাবীর                            
    ১১. তাবারানী আওসাত  
    ১২. কানযুল উম্মাল                                  
    ১৩. ইবনুস সুন্নী

◘ হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ

    ১. ফাতহুল বারী
    ২. উমদাতুল কারী
    ৩. আল কাওকাবুদ্দুররী
    ৪. ফয়যুল বারী
    ৫. মা‘আরেফুস সুনান
    ৬. আল আবওয়াব ওয়াত তারাজিম
    ৭. ফাতহুল মুলহিম
    ৮. শরহে মুহায্‌যাব লিন্নাববী
    ৯. তাদরীবুর রাবী
    ১০. কিতাবুল মাওযূ‘আত (মুল্লা আলী কারী)              

◘ ফাতাওয়া ও ফিক্‌হগ্রন্থ

    ১. মাবসূত
    ২. ফাতাওয়া বায্‌যাযিয়া
    ৩. ফাতাওয়া শামী
    ৪. ইমদাদুল ফাতাওয়া
    ৫. নূরুল ঈযাহ
    ৬. কিফায়াতুল মুফতী





1 comment:

Powered by Blogger.