Header Ads

আগামীকাল নতুন সুর্য উঠবে। নতুন দিন শুরু হবে। নতুন একটি পৃথিবীর যাত্রা শুরু হবে। সেই পৃথিবীটা শুধু আল-কোরআনের। এই সপ্ন প্রত্যহই দেখি। শুধু বান্তবায়ন সময়ের অপেক্ষা............

" দীন প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম "

                                           " দীন প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম "

- বেলাল আল জাবের

মহান আল্লাহ তায়ালা মানব সৃষ্টির প্রারম্ভেই তার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে
বলেন- "ইন্নি যায়িলুন ফিল আরদি খলিফা"(সূরা বাকারাহ , আয়াত-৩০) নিশ্চয়ই
আমি পৃথিবীতে খলিফা পাঠাবো। আল্লাহর পাঠানো এই খলিফার মিশন কি হবে ? না
কি সে লক্ষ্যহীন অন্ধকার গলি পথে  নিজেকে হারিয়ে ফেলবে? আল্লাহ পাক তার
উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন এই আয়াতে- " কুনতুম খাইরা উম্মাতিন উখরিজাত লিন্নাছি তা
মুরুনা বিল মারুফি অতান হাওনা আনিল মুনকার"(সুরা আল-ইমরান, আয়াত -১১০)
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানব জাতির কল্যানের জন্যই তোমাদের উদ্ভব
ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজের
নিষেধ(অনুৎসাহিত / বাধা প্রাদান) করবে। অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা চমৎকার
ভাবে বললেন, খলিফার একমাত্র মিশন হল সৎকাজের নির্দেশ ও অন্যায় কাজের
নিষেধ করার মাধ্যমে মানব জাতির কল্যান সাধন । তো খলিফার এখন জানা দরকার
দীন প্রচারের এই মহান দায়িত্ব  সে কোথায় , কখন এবং কিভাবে পালন করবে। এর
বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সুরা হুজরাতে দিয়ে বলেন- হে মানব মন্ডলী
! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তার পর আমি তোমাদের
জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরের সাথে (যোগাযোগের
মাধ্যমে) পরিচিত হতে পার  (সূরা হুজরাত , আয়াত-১৩)আলোচ্য আয়াতে মানব
সমাজের একটি শ্রেনী বিভাগের বর্ণনা পাওয়া যায়। তা হল মানুষ সৃষ্টিগত ভাবে
একক আইডিতে পরিচিত হবে তার পর তার গোত্রগত(সামাজিক) পরিচয় এর পর তার
জাতিগত(রাষ্ট্রীয়) পরিচয়ে পরিচিত হবে। এক কথায় মানুষ তার প্রতিটি পর্যায়ে
এক একটি পরিচয় ধারন করবে। ইহা আল্লাহর বিধান । সুতরাং মানুষ তার খেলাফতের
যে মহান মিশন নিয়ে এই পৃথিবীতে আগমন করেছে তা সে পালন করতে হবে তার এই
ভিন্ন ভিন্ন প্রতিটি সামাজিক স্তরেও।  যা পালন করা প্রত্যকটি মানুষের উপর ফরয ।
যাই হোক এখন বাকী থাকে মানুষ তার এ ফরয দায়িত্ব কখন এবং কিভাবে পালন করবে।
এর ব্যাখ্যাও আল-কোরান চমৎকার করে স্পষ্ট করেছে। এরশাদ হচ্ছে- ওয়াউবুদ
রাব্বাকা হাত্তা ইয়াতিকাল ইয়াকিন(সূরা হিজর, আয়াত-৯৯) এবং তুমি মৃত্যু
পর্যন্ত তোমার প্রভুর দাসত্ব (অর্পিত দায়িত্ব পালন) কর। আয়াতে আহবান করা
হয়েছে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ তার দায়ী
ইলাল্লাহর দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। আজ দেখা যায় তার উল্টো চিত্র,
ক্ষেত্র বিশেষে তো খেলাফতের এ মহান মিশন পালনের দায়িত্ব নির্দিষ্ট কিছু
সংখ্যক ব্যাক্তি, নির্দিষ্ট কিছু সময় এবং নির্দিষ্ট কিছু স্থানের সাথে
সিমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। দীনের প্রচার, হয় আমরা দিয়ে দিয়েছি অথবা
নিজেরা নিয়ে নিয়েছেন

প্রযুক্তির ট্রেনিং-https://balalislamicmedia.blogspot.com/
নির্দিষ্ট কিছু আলেম। আল্লাহর পথে আহবান আজ মসজিদ-মাদ্রাসার মধ্যে
সিমাবদ্ধ। এদিকে রমজান মাস ও হজ্জের মৌসুম ছাড়া তেমন কোন দীনের প্রচার
কোন পর্যায়েই পরিলক্ষিত হয়না। এমন যখন অবস্থা তখন প্রচারের মাধ্যমগুলোর
অবস্থা আরও বেগতিক। এ ফ্লাটফর্মগুলো অধিকাংশই ইসলাম বিরোধীদের হাতের
মুঠোয়। অন্য দিকে ধর্মের ধারক বাহক আলেম সমাজ তো ফতোয়াবাজির
জায়েয-নাজায়েযের গ্যাড়াকলে আবদ্ধ রেখেছেন নিজেদেরকে। অথচ আল্লাহ তায়ালার
আদেশ - "উদয়ু ইলা ছাবিলি রাব্বিকা বিল হিকমাতি ওয়াল মাওইযাতিল
হাছানাহ(সূরা নাহল, আয়াত- ১২৫) আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে আহবান করুন
হিকমত ও সদুপদেশ দ্ধারা এবং তাদের সাথে আলোচনা করুন সদ্ভাবে। আপনার রব,
তার পথ ছেড়ে কে বিপদ্গামী হয়, সে সমন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎ পথে আছে
তাও তিনি সবিশেষ অবহিত। আয়াতে আল্লাহ পাক মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান
করার মাধ্যম বলেছেন "হিকমত"। এক্ষনে আমাদের বুঝা দরকার হিকমত কি?
মুফাসসিরীনে কেরাম বলেছেন হিকমত হল কোরান। যেহেতু আল-কোরানের বক্তব্য
সুদৃড় ও তাৎপর্যপুর্ণ। আবার হিকমত অর্থ "কৌশল"। এখানে হিকমতের ব্যাপকার্থ
গ্রহন করাই শ্রেয়। তাহলেই দীন প্রচারে আল্লাহর নির্দেশ পরিপুর্ণ রুপে
পালন করা সম্ভব হবে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব
প্রথম দীন প্রচার করলেন ব্যাক্তিগত দাওয়াতের মাধ্যমে। প্রথমেই রাসূলে
আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মাজান খাদিজাতুল কোবরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু কে দীনের প্রতি আহবান করেন। তার পর এক এক করে মক্কা ও
মদিনার সকলের নিকট দীনি দাওয়াত পৌঁছান। হিজরতের পরে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াতের নতুন একটি মাধ্যম গ্রহন করেন
পত্র। নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক এক করে হাবসা বাদশাহ
নাজ্জাশী, রোমের বাদশাহ কায়সার, পারস্য বাদশাহ কিসরা সহ সকল রাষ্ট্র''
প্রধানের নিকট পত্র পাঠিয়ে দীনের দাওয়াত দেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম  দীন প্রচারে যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বোচ্চ সময় উপযোগী ও
বৈপ্লবিক কৌশলটি ব্যবহার করে ইসলামের মহান অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত
করেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতৃক গৃহীত দীন প্রচারের
এ নতুন মাধ্যম আমাদেরকে শিক্ষা দেয় কিয়ামত পর্যন্ত যোগাযোগের যতগুলো
পদ্ধতিই আবিস্কার হবে সব গুলোতেই দীনের প্রচার করা মুসলমানদের উপর ফরয।

প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে এসে মানুষ যখন ক্রমাগত সম্মিলিত হচ্ছে
অন্তর্যাল বা ইন্টারনেটের ছায়াতলে। ঠিক তখন এ ধারায় যুক্ত হল  চমকপ্রদ এক
নাম সোশ্যাল নেটওয়াকিং সাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এই মাধ্যম
হিসেবে ফেইসবুক, টুইটার, গুগুল প্লাস এর মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলো
সৃষ্টি করেছে নতুন এক ধরনের সামাজিক বাস্তবতা। আগেকার দিনে  সামাজিক
যোগাযোগ বলতে বুঝানো হত আত্মীয়তার সম্পর্ক, ধর্মীয় সম্পর্ক, মানবিক
সম্পর্ক, সামাজিক ও জাতীয় সম্পর্ক অটুট রাখতে মানবীয় যোগাযোগ । কিন্তু
বর্তমানে মানবীয় যোগাযোগের  সাথে যুক্ত হয়েছে যান্ত্রিকতার দ্বৈত
সংস্করন। যে সংস্করনের এক দিকে ভার্চুয়াল রুপ আর অন্য দিকে সামাজিক রুপ।
এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে বুঝায় একটি অনলাইন সেবা,ফ্লাট ফর্ম তথা
ওয়েবসাইট। যা মানুষে মানুষে গড়ে উঠা সামাজিক সম্পর্কের নেটওয়ার্ক। যেখানে
ব্যাক্তি তার বিশ্বাস,তার চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারনা, আবেগ-অনুভূতি ও
মানবীয় বিষয় গুলো তার নিজস্ব নেটওয়ার্কে তুলে ধরার মাধ্যমে সামাজিক
সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। প্রেক্ষাপট যখন এমন তখন আমরা এই যান্ত্রিক মাধ্যমটিতে
দেখতে পাই ব্যক্তি প্রথমত ব্যাক্তিগত একক ভার্চুয়াল আইড়িতে পরিচিত হন, এর
পর একটি পরিবার, একটি সমাজ, একটি জাতি আবার একটি ভার্চুয়াল বিশ্বের মধ্যে
বিচরন করেন। এই ভার্চুয়াল জগতে, এর মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করা প্রত্যেকটি
মুসলমানের উপর ফরয। আমি পুর্বে উল্লেখ করেছি কোথায় ইসলাম প্রচার করতে
হবে। মনে রাখতে হবে ইসলাম বিরোধীরা বসে নেই। এই নতুন জগতে অশ্লিলতা,
পর্নগ্রাফি, নাস্তিকতা, বিশৃংখলা, আল্লাহ ও তার রাসূলকে গালি দেয়ার জন্য
থাবা বাবাদের অভাব নেই।

সুতরাং এখনি উপযুক্ত সময় আমাদেরকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে দীন প্রচারের
জন্য চমৎকার এ নতুন মাধ্যমটিতে। এ ক্ষেত্রে আলেম সমাজকে অগ্রনী ভুমিকা
পালন করতে হবে। যদিও অনেক সমুজদার আলেম এগিয়ে এসেছেন তথাপি প্রয়োজনের
তুলনায় তা যৎসামান্য মাত্র। অন্যথা অনেক দেরী হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একটি
সাইট  ফেইসবুক তাদের পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে বর্তমানে তাদের ব্যাবহারকারীর
সংখ্যা দুই বিলিয়নের উপরে। ক্রমাগত এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি
টুইটার সহ আরো অনেক গুলো সাইট তো রয়েছেই।
যেহেতু আমরা সকলেই আল্লাহর খলিফা, তাই খেলাফতের মহান দায়িত্ব পালনের জন্য
জ্ঞান রাজ্যের সকল শাখায় আমাদের বিচরন থাকবে এটাই চান আমাদের মহান প্রভূ।

ইমেইলঃ balalhosan@gmail.com
মোবাইল:01712907983

2 comments:

Powered by Blogger.