Header Ads

আগামীকাল নতুন সুর্য উঠবে। নতুন দিন শুরু হবে। নতুন একটি পৃথিবীর যাত্রা শুরু হবে। সেই পৃথিবীটা শুধু আল-কোরআনের। এই সপ্ন প্রত্যহই দেখি। শুধু বান্তবায়ন সময়ের অপেক্ষা............

মানব সম্পদ তৈরীতে মাদ্রাসা শিক্ষা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ।

মানব সম্পদ তৈরীতে  মাদ্রাসা শিক্ষা  : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ।

 বেলাল আল জাবের

মানবঃ- মানব অর্থ মানুষ।এ মানব দুই প্রকার।১. সুসভ্য।
২. অসভ্য।
১. HUMAN বা সুসভ্য: সুশিক্ষা, নৈতিকতার মাধ্যমে মানবিক গুনাবলী অর্জন।অর্থাৎ MAN + RATIONALITY AND MORALITY= HUMAN
অতএব, সে হবে যুক্তিবাদী,বুদ্ধিমান ও সংবেদনশীল মানুষ।
২.ANIMAL বা অসভ্যঃ সুশিক্ষা, নৈতিকতাহীন মানবগুনাবলী সম্পন্ন ব্যক্তি।অর্থাৎ MAN- RATIONALITY AND MORALITY= ANIMMAL. অতএব, সে হবে অযৌক্তিক,গর্দভ ও সংবেদনহীন।উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষীতে  প্রশ্ন , দেশের মানুষ ১৪ কোটি হলে মানুষ কতজন হবে? এ প্রশ্নের জবাব দেয়া কি খুব সহজ?
সম্পদঃ- আধিকাল হতে সম্পদ বলতে আমরা বুঝে থাকি- সোনা,হীরক,লৌহ, তেল,বাড়ি ঘর, ফসল,গাছ- পালা, মিল- কারখানা,দোকান- পাট ইত্যাদি।কিন্তু মানুষ যে সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ তা এতদিন অর্থনীতিবিদগন যথাযথ গুরুত্ব দিতেন না।১৭৫০ সালের পর ইংলেন্ডে শিল্প বিপ্লবের শুরু হলে অর্থনীতিবিদদের টনক নড়ে।তখন তারা ঘোষনা দেন মানুষ অর্থনীতির প্রধান সম্পদ।আসলে সৃষ্টির সেরা সম্পদ হল মানুষ।এখানে প্রশ্ন সকল মানুষই কি সম্পদ?
মানব সম্পদঃ- মানব সম্পদ বলতে জ্ঞান সম্পদে সমৃদ্ধ এমন বুদ্ধিমান,দক্ষ, নৈতিকমানে উন্নত ও কর্মপটু মানুষকে বুঝায়,যে মানুষ দেশের সার্বিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যথাযথ অংশ গ্রহন করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।অন্যভাবে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দেশ প্রেমিক,দেশীয় সংস্কৃতি লালনকারী,মেধাবী,দক্ষ, সৎ,কর্মপটু, প্রযুক্তি,কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন, একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করতে সক্ষম ব্যাক্তিই মানব সম্পদ।
সুতরাং সম্পদ বলে বিবেচিত হবে সে মানুষ যে--
১. মেধাবী ও শিক্ষিত।গর্দভ বা নিরক্ষর নয়।
২.প্রেষনা ও প্রশিক্ষন প্রাপ্ত,কর্মঠ। অপ্রশিক্ষিত,  অলস ব্যক্তি নয়।
৩. শারিরিক ও মানষিক ভাবে সুস্থ। অসুস্থ ও রুগ্ন নয়।
৪. সৎ ও নৈতিকমানে উন্নত মানুষ। অসৎ, কাপুরুষ নয়।
৫. দশভাবনায় উদ্ধুদ্ধ ও মানবিক গুন সম্পন্ন মানুষ।
madrasah Student and teacher-https://balalislamicmedia.blogspot.com/

মাদ্রাসাঃ-
 মাদরাসা শব্দটি আরবি।শাব্দিক অর্থ- বিদ্যা শিক্ষা গ্রহন ও প্রদানের স্থান।পরিভাষায় বলা যায় যে বিদ্যাপীঠে ইসলাম ধর্মের আলোকে  ধর্মীয় ও বাস্তবমুখী জ্ঞান বিজ্ঞান শিখন শেখানো হয় তাই মাদ্রাসা।ভারতীয় শিক্ষাবিদ আফজাল হাসাইন তার " ফান্নু তা'লীম ওয়া তারবীয়া" গ্রন্থে বলেছেন- যে প্রতিষ্ঠান গুলো সুশৃঙ্খল ও বিধিবদ্ধ প্রচেষ্টায় ইসলাম ধর্মের দর্শন ছাত্রদের জন্য আঞ্জাম দিয়ে থাকে তাই মাদ্রাসা।
শিক্ষাঃ- শিক্ষা সংস্কৃত 'শাস' ধাতু থেকে উৎপন্ন।'শাস' অর্থ শাসন করা,পরামর্শ দেয়া।বাংলা শিক্ষা শব্দের সমার্থক শব্দ বিদ্যা।অর্থ জ্ঞান আহরন করা।আরবী প্রতিশব্দ " তা'লীম"।শাব্দিক অর্থ শিখিয়ে দেয়া। পরিভাষায়, শিক্ষা হচ্ছে নির্ধারিত পন্থা অনুসরন করে ছাত্রদের জ্ঞান ও নৈপুণ্য অর্জনে সহায়তা কররা।

শিক্ষার   পদ্ধতিঃ-
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম অবতীর্ন সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াতে বলেন- ১.পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।২. তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাধা রক্ত থেকে।৩. পড় এবং তোমার প্রতিপালক সর্বাপেক্ষা সম্মানিত।৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।৫.তিনি মানুষকে শিখিয়েছন যা সে জানতোনা।
অত্র আয়াতগুলোতে শিক্ষার যে পদ্ধতিগুলো পাওয়া যায় তা হল- ★১ম আয়াতে শিখনের আদেশ দেয়া হয়েছে।আমরা যাকে ইংরেজীতে LEARNING  বলি।
★ ৪র্থ আয়াতে শেখানোর কথা বলা হয়েছে।যাকে ইরেজীতে  TEACHING  বলে।
★৫ম আয়াতে গভেষনার কথা বলা হয়েছে।
সতরাং শিক্ষার পদ্ধতি হল, শিখন, শেখানো ও গভেষণা।
শিক্ষার প্রকারঃ- আয়াতে কারীমা গুলোতে শিক্ষার   প্রকার বলা হয়েছে দুটি।১. ধর্মীয় শিক্ষা  ২. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান। # ১ম আয়াতে আল্লাহর নামে পাঠ করার আদেশ দানের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিদ্যা বুঝানো হয়েছে।অর্থাৎকুরআন,হাদীস,ফিকহ ইত্যাদি উদ্দেশ্য।
# ২য় আয়াতে, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাধা রক্ত দ্বারা।এর মাধ্যমে মানব সৃষ্টির রহস্য বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্পর্কে বলা হয়েছে।অর্থাৎ জীব বিজ্ঞান,  চিকিৎসা বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি উদ্দেশ্য।
মাদ্রাসা শিক্ষাঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট, যে প্রতিষ্ঠানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনি জ্ঞান - বিজ্ঞানকে শিখন,শেখানো ও গভেষনায় উৎসাহিত করা হয় তাকে মাদ্রাসা শিক্ষা বলে।
বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষাঃ-
মাদ্রাসার সর্বপ্রথম গোড়াপত্তন হয় আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বৎসর পুর্বে।মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম মক্কার এক নির্জন পাহাড়ের পাদদেশে ' দারুল আরকাম' নামে মাদ্রাসা চালু করেন। উপমহাদেশে এ মাদ্রাসা চালু হয় সুলতানী আমল ১২০৬ সালে মসজিদগুলোতে এবং প্রথম আনুষ্ঠানিক ১৭৮০ সালে লর্ড ওয়ারেন হষ্টিং কতৃক কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।যা বর্তমানে মাদ্রাসাই আলিয়া ঢাকা নামে পরিচিত।১৮৬০ সালে ইংরেজ শাসকদের ফৌজদারী ও দেওয়ানী আইন চালু হলে ইংরেজ সরকারের নিকট মাদ্রাসা শিক্ষা অনুমোদন পায়।পরবর্তীতে ১৯২৮ সালে সেন্ট্রাল বোর্ড অব মাদ্রাসা একজামিনেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৪৭ সালে কলকাতা আলিয়া বাংলাদেশর রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর  বাংলার আপামর জনতার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের অভিভাবকত্তে ' বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন ১৯৭৪' মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন,প্রসার ও মাদ্রাসা বোর্ড অনুমোদন দেয়া হয়।বর্তমানে দেশে ৯০০০ হাজার দাখিল মাদ্রাসা ৩৫০০ আলিম মাদ্রাসা ১৫০০ ফাযিল মাদ্রাসা ও ৩০০ কামিল মাদ্রাসা চালু রয়েছে।যার মধ্যে ০৩ টি সরকারী আলিয়া।
মানব সম্পদ তৈরীতে মাদ্রাসাঃ
ড. আবুল ফারাহ তার গভেষনায় লিখেন- If You Give  Them Three " RS"ie, Reading Writting and Arithmatic and do not give them the Forth 'R'ie Religion They ere sure to become fifth 'R'ie Rascal.সুতরাং জ্ঞান বিজ্ঞান  গনিত চর্চার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা অতীব জরুরী।বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলো মানবসম্পদ তৈরীতে সে কঠিন কাজটিরই আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা মাদ্রাসাগুলো থেকে শুধু দেশ প্রেমিক,নৈতিক গুলাবলী সম্পন্ন একদল নিবেদিত প্রান কর্মী বের হচ্ছে।দীর্ঘ প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে আলিয়া  মাদ্রাসা সমৃদ্ধ হয়েছে তার স্ব মহিমায়।জাতীয় ভিভিন্ন সংকট মুহুর্তে অবদান রেখেছে তার শিক্ষার্থী দ্বারা।এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কোন কালিমা তাকে স্পর্শ করেনি।ভবিষ্যতেও  জঙ্গী,আতংকবাদী ইত্যাদি কোন কালিমাই তাকে স্পর্শ করবেনা ইহা আমি হলফ করে বলতে পারি।জানা মতে রেমিটেন্স আয়কারী বিশ্বের দেশগুলোর মধ্য বাংলাদেশর অবস্থান সপ্তম।যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১২ শতাংশ।সরকারী হিসেব অনুয়ায়ী বর্তমানে বাংলাদেশী প্রবাসী সংখ্যা প্রায় ৮৭ লাখেরও বেশী। বেসরকারী হিসেবে এর সংখ্যা  ১ কোটি ২০ লাখের বেশী।তার মধ্যে ৬৫ ভাগ শ্রমিকই কাজ করে মধ্য প্রাচ্যে।যে দেশের ভাষা আরবী এবং সংস্কৃতি ইসলামী তাহজীব তমদ্দুনের উপর গঠিত।সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে  বিশেষ গুরত্ত দিলে মাদ্রাসা গুলো এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশাকরি।তাতে দেশের এ  সিংহভাগ শ্রমিকের পূর্ব থেকেই ভাষাগত দক্ষতা অর্জিত হবে ও দক্ষ শ্রমিক সরবরাহের ফলে আরও বেশী রেমিটেন্স আয় করা সম্ভবপর হবে।তাই মাদ্রাসা গুলোতে জীবন ও কর্মমুখী করিগরি শিক্ষা, বেসিক ট্রেড কোর্স চালু, কম্পিউটার লেব্রেটরী, বিজ্ঞান, ওকমার্স কোর্স, স্পেশাল এরাবিক স্পেকিং কোর্স চালু করা যেতে পারে।এজন্য মাদ্রাসা শিক্ষক গনকে অাবশ্যই আধুনিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। মাদ্রাসার একমাত্র ট্রেনিং সেন্টার B.M.T.T.I ·  কে নায়েম এর মত ক্ষমতা দিতেহবে।  সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন টিচার্স ট্রেনিং কলেজে BMED কোর্স চালু করতে হবে।মাদ্রাসা শিক্ষার পরম বন্ধু জাতির  জনক শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননী প্রধান মন্ত্রী জাতীর জনকের অসুম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করতে মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরত্ব দিয়ে যেভাবে বাংলাদেশের একমাত্র আরবী বিশ্ববিদ্যালয়,মাদ্রাসা অধিদপ্তর,মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তেমনি করে উপরোক্ত প্রস্তাবনা গুলো সদয় বিবেচনা করে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের একমাত্র  আলোর প্রদীপ হয়ে মাদ্রাসার ইতিহাসে চির ভাস্কর থাকবেন।এদেশের ইসলাম প্রিয় জনতা তাই প্রত্যাশা করে।

Email: balalhosan@gmail.com

1 comment:

  1. অসাধারন পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। Islamic Thinking Bangladesh

    ReplyDelete

Powered by Blogger.