Header Ads

আগামীকাল নতুন সুর্য উঠবে। নতুন দিন শুরু হবে। নতুন একটি পৃথিবীর যাত্রা শুরু হবে। সেই পৃথিবীটা শুধু আল-কোরআনের। এই সপ্ন প্রত্যহই দেখি। শুধু বান্তবায়ন সময়ের অপেক্ষা............

সিফফিনের যুদ্ধ; কারবালার ঘটনাকে এগিয়ে দেয়



১) সিফফিনের যুদ্ধঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ(٣٩)
যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে যারা আক্রান্ত হয়েছে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ নিশ্চয় তাদের সাহায্য করতে সক্ষম (কুরআন- সুরা হাজ্জ,২২:৩৯)হযরত আলী (রাঃ) সিফফিনের যুদ্ধে শত চেষ্টা করেও মাবিয়া (রাঃ)কে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে পারেননি। ফলে আলী(রা) তাঁর প্রতিনিধি ইয়াযিদ ইবন হারিসকে দিয়ে শাম বাহিনীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা করালেন- সত্যের দিকে তোমরা ফিরে আসবে এই উদ্দেশ্যে দীর্ঘকাল প্রতীক্ষা করেছি এবং তোমাদের সামনে প্রমাণ রেখেছি কিন্তু তোমরা সাড়া দাওনি। এখন আমি সম্পর্ক ছিন্নতার ঘোষণা দিচ্ছি। ফলে হযরত মাবিয়া (রাঃ) কতৃক মুসলিম বাহিনী মুহুর্তেই আক্রান্ত হয়। তখন হকের পক্ষে হযরত আলী (রাঃ) তরবারী ধারন করেন। যাকে ইসলামের  ইতিহাসে সিফফিনের যুদ্ধ বলে অবিহীত করা হয়।
যুদ্ধ সময়ঃ- জুলাই মাস, ৬৫৭ খৃষ্টাব্দ।হিজরি ৩৭ সাল
যুদ্ধ স্থানঃ- সিফফিন, ইউফ্রেটিস নদীর তীর, ইরাক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা।ফরাত নদী তীরবর্তী কারবালার নিকটে অবস্থিত।
প্রথম পক্ষঃ- হজরত আলী(রাঃ)- (ফাতিমার স্বামী ও নবীজির জামাতা, বহুল পরিচিত, তাই অধিক পরিচয়ের দরকার আছে বলে মনে করছিনা)।
দ্বিতীয় পক্ষঃ- হযরত মাবিয়া(রাঃ)- (পিতা আবু সুফিয়ান, মাতা- হিন্দা, এই সেই হিন্দা যিনি নবিজীর চাচা আমির হামজার হৃদপিন্ড কাঁচা চিবিয়ে খেয়েছিল। মাবিয়ার হলেন বহুল পরিচিত ইয়াযিদ- মানে এযিদের পিতা)।
লেখকঃ বেলাল আল জাবের-balalislamicmedia.blogspot.com/
 
যুদ্ধের কারনঃ  মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يا أيها الذين آمنو أطيعو الله وأطيعو الرسول و أولي الأمر منكم، فإن تنازعتم في شيء فردوه إلى الله و الرسول إن كنتم تؤمنون بالله و اليوم الآخر.
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারিদের(খলিফাদের)অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর (সূরা নিসা: ৫৯)
খলিফার অনুগত্যকরা ফরয। যতক্ষন তিনি আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধান মোতাবেক ফয়সালা করা থাকেন। কিন্তু আমরা এই যুদ্ধে দেখতে পাই খলিফার প্রতি ভুল বুঝাবুঝি হেতু হযরত ওসমান (রাঃ) হত্যার বিচার দাবি করে সিরিয়ার গভর্ণর হযরত মাবিয়া (রাঃ) বড় আন্দোলন গড়ে তোলেনকারন ওসমান (রাঃ) তার চাচাত ভাই ছিলেন। যাকে অন্যায় ভাবে মুনাফেক  সাবাঈ দল হত্যা করেছিল দিকে হযরত আলী (রাঃ) রাজনৈতিক প্রশাসনিক কৌশল হেতু বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্ভ করছিলেন। কিন্তু আন্দোলন এত তিব্রাকার ধারন করছিল যে, হযরত আলী (রাঃ) তা সমাধানের জন্য জামালের যুদ্ধ শেষে কুফায় ফিরে এসে ৩৬ হিজরি ১২ রজব সোমবার তিনি জারির ইবনে আব্দিল্লাহ আল-বাজালিকে একটা পত্রসহ মুয়াবিয়ার কাছে সিরিয়া প্রেরণ করেছিলেন। পত্রে তিনি লিখেছিলেন যে, মুজাহির ও আনসার তাঁর বায়াত গ্রহণ করেছে এবং হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) যেন বায়াত গ্রহণ করে হযরত উসমান (রাঃ) হত্যার মামলা পেশ করে, যাতে তিনি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী রায় প্রদান করতে পারেন। কিন্তু হযরত মাবিয়া (রাঃ) বায়াত গ্রহনে গড়িমসি করে ওসমান (রাঃ) হত্যার বিচার দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। জারির কাছে বিস্তারিত জানতে পেরে হযরত আলী (রাঃ) খুব দুঃখ পেয়েছিলেন এবং মালিক ইবনে হাবিব আল- ইয়ারবুইকে নুখায়লাহ উপত্যকায় সৈন্য সমাবেশ করার আদেশ দিলেন, যাতে মাবিয়া (রাঃ) কে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা যায়ফলে কুফার উপকণ্ঠে প্রায় আশি হাজার লোক জড়ো হয়েছিলো। প্রথমে হযরত আলী (রাঃ) জিয়াদ ইবনে নদর আল-হারিছির নেতৃত্বে আট হাজারের একটা শক্তিশালী রক্ষীবাহিনী এবং সুরায়হ ইবনে আল- হারিছির নেতৃত্বে অন্য একটা চার হাজারের শক্তিশালী বাহিনী সিরিয়া আভিমুখে প্রেরণ করলেন। অবশিষ্ট সৈনবাহিনির নেতৃত্ব নিজে গ্রহণ করে ৫ শাওয়াল বুধবার হযরত আলী (রাঃ) সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন। হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)পূর্বেই সিফফিন পৌছে ছাউনি পেতেছিল এবং ফরাত কূল অবরোধ করে সৈন্য মোতায়েন করেছিলো। হযরত আলী (রাঃ) সেখানে পৌঁছে মুয়াবিয়াকে অনুরোধ করে পাঠালেন যেন সে ফরাত কূল থেকে সৈন্য সরিয়ে পানি নেয়ার ব্যবস্থা অবরোধমুক্ত করে। হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে হযরত আলী (রাঃ) এর সৈন্যগন সাহসিকতার সাথে আক্রমণ করে ফরাত কূল দখল করে। তারপর হযরত আলী (রাঃ) মুয়াবিয়ার কাছে বশীর ইবনে আমর আল-আনসারি, সাইদ ইবনে কায়েস আল-হামদানি ও শাবাছ ইবনে আত-তামিমীকে প্রেরণ করলেন এ জন্য যে, তারা যেন যুদ্ধের ভয়াবহতা তাকে বুঝিয়ে বলে এবং সে যেন বায়াত গ্রহণ করে একটা মীমাংসায় আসতে রাজি হয়। এ প্রস্তাবে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)সরাসরি বলে দিল যে, উসমানের রক্তের প্রতি সে উদাসীন থাকতে পরে না; কাজেই তরবারিই একমাত্র মীমাংসা- এর কোন বিকল্প নেই। ফলে ৩৬ হিজরি সালের জিলহজ মাসে উভয় পক্ষের যোদ্ধারা একে অপরের মোকাবেলা করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়লো।
যুদ্ধ সংঘঠিতঃ- হযরত আলী (রাঃ) পক্ষ থেকে অশ্বারোহীগণের সেনাপতি হলেন মালিক আশতার ও পদাতিক বাহিনির সেনাপতি হলেন আম্মার ইবনে ইয়াসির এবং মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে অশ্বারোহীগণের সেনাপতি হলেন সহল হুনায়েক ও পদাতিকের সেনাপতি হলেন কায়েস ইবনে সাদ। হযরত আলী (রাঃ) ঝাণ্ডা বহনকারী ছিল হাসিম ইবনে উতবাহ। মুয়াবিয়ার সেনাদলের দক্ষিণ বাহুর সেনাপতি ছিল ইবনে জিলকালা ও বাম বাহুর সেনাপতি ছিল হাবিব ইবনে মাসালামাহ। জিলহজ মাসের শেষে যুদ্ধ বন্ধ করা হল মুহরামের জন্য যুদ্ধ ১ মাস বন্ধ থাকার পর ১ সফর আবার যুদ্ধ শুরু হল। এতে অশ্বারোহী অশ্বারোহীর উপর পদাতিক পদাতিকের উপর ঝাপিয়ে পড়লো এবং ভয়ানক যুদ্ধে দৃপ্তপদে বীর বিক্রমে উভয় পক্ষ যুদ্ধ করেছিলোযুদ্ধের মাঝা মাঝিতে আলী (রাঃ) এর পদাতিক বাহিনির সেনাপতি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার শত্রু সৈন্য ব্যূহের মধ্যে প্রবেশ করে একের পর এক আক্রমণ রচনা করে তাদের মোকাবেলা করছিলো। তখন কিছু সৈন্য তাঁকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং আবু আল- যুহরী নামক এক পিশাচ তাঁকে এমন আঘত করেছিল যে যা সহ্য করতে না পেরে তিনি সাউনিতে ফিরে গেলেন। সাউনিতে ফিরে তিনি পানি চাইলেন। লোকেরা তাঁকে এক বাটি দুধ দিয়েছিল। দুধ দেখে আম্মার বলেছিলেন, আল্লাহ্‌র রাসুল ঠিক কথাই বলেছেন লোকেরা এই কথার অর্থ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র রাসুল আমাকে একদিন বলেছিলেন এ পৃথিবীতে আমার শেষ খাদ্য হবে দুধ এই দুধ পান করার পর তিনি আল্লাহ্‌র কাছে নিজেকে সপে দিলেন। হযরত আলী (রাঃ)তাঁর মাথা কোলে তুলে নিয়ে বললেন, নিশ্চয়, যদি কোন মুসলিম আম্মারের মৃত্যুতে মানসিক ভাবে আহত না হয়ে থাকে তবে তাকে যর্থাথ ঈমানদার বলা যাবে না। হযরত আলী (রাঃ)অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন, রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন আম্মার সত্যের সাথে সত্য আম্মারের সাথে আম্মার ইবনে ইয়াসির ইবনে আমির ৩৭ হিজরি সনের ৯ সফর সিফফিন যুদ্ধে মারা যান। এদিকে আম্মারের মৃত্যুতে মুয়াবিয়ার সৈনদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলতাদের মনে ধারণা দেয়া হয়েছিল যে, তারা ন্যায়ের জন্য হযরত আলী (রাঃ)এর বিরুদ্ধে লড়ছে। আম্মারের সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) এর ঐ বানী অনেকেই জানত, আম্মারের মৃত্যুতে তাদের ভুল ভেঙ্গে গেল। তারা বুঝতে পারল যে তারা অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত এবং হযরত আলী (রাঃ)ন্যায়ের পথে রয়েছেন। এ চিন্তা অফিসার হতে শুরু করে সাধারন সৈনিক সবার মনে আলোড়ন তৈরি করেছিলো। যুদ্ধের অষ্টম দিনেহযরত আলী (রাঃ) নিজেই ময়দানে গেলেন এবং এমন প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ করলেন যে যুদ্ধক্ষেত্র কম্পিত হয়ে উঠেছিল। বর্শা ও তীরবৃষ্টি উপেক্ষা করে ব্যূহের পর ব্যূহ ভেদ করে শত্রুর উভয় লাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুয়াবিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বললেন, অযথা লোক ক্ষয় করে লাভ কি? তুমি আমার মোকাবেলা কর। তাতে একজন নিহত হলে অপরজন শাসক হবে এ সময় আমর ইবনে আস মুয়াবিয়াকে বললো, আলী ঠিক বলেছে। একটু সাহস করে তার মোকাবেলা কর। হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)বললো, তোমাদের প্ররোচনায় আমি আমার প্রান হারাতে প্রস্তুত নই এ বলে সে পিছনের দিকে চলে গেল। মুয়াবিয়াকে পিছনে হাটতে দেখে হযরত আলী (রাঃ) মুচকি হেসে ফিরে এলেন। যে সাহসিকতার সাথে হযরত আলী (রাঃ) সিফফিনে আক্রমণ রচনা করেছিলেন তা নিঃসন্দেহে অলৌকিকযুদ্ধের নবম দিন রাত ঘনিয়ে আশা পর্যন্ত প্রচন্ড যুদ্ধ চলছিল। এদিনের রাত ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রাত যা ইতিহাসে আল- হারিরের রাত্রি বলে খ্যাত। এ রাতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, ঘোড়ার খুরের শব্দ ও মুয়াবিয়ার সৈন্যদের আর্তনাদে আকাশ প্রকম্পিত হয়েছিল। আর হযরত আলী (রাঃ)এর দিক থেকে অন্যায় ও বিভ্রান্তি নিপাত যাক- শ্লোগানে তাঁর সৈন্যগণের সাহস বৃদ্ধি করছিল এবং মুয়াবিয়ার হ্রদয় শুকিয়ে দিয়েছিল। সকাল বেলায় দেখা গেল ত্রিশ হাজার উর্ধে লোক নিহত হয়েছে। দশম দিনে হযরত আলী (রাঃ)এর সৈন্যগন একই মনোবল নিয়ে যুদ্ধে গেল। দক্ষিণ বাম বাহুর দলনেতা ছিলেন মালিক আল-আসতার এবং বাম বাহুর নেতা আব্বাস। তারা এমন তীব্র বেগে আক্রমণ রচনা করেছিলেন যে, মুয়াবিয়ার সৈন্যরা পালাতে শুরু করল। এ দিন অবস্থা বেগতিক দেখে চতুর আমর বিন আচ এর পরামর্শে হযরত মাবিয়া (রাঃ) বর্শার মাথায় পবিত্র কোরানের পৃষ্ঠা গেথে চিৎকার করে ঘোষোনা দিতে থাকেন" আমাদের মাঝে হকের ফয়ছালা করবে এই কোরান" আমরা উভয় পক্ষ সেই পয়সালা মেনে নিব। আমর বিন আসের এই কূটকৌশলে কাজ হল। কুরানের অমর্যাদা হবে এই ভয়ে আলীর সৈন্যরা আর যুদ্ধ করতে চাইলনা। হযরত আলী সৈন্যদের অনেক বুঝাতে চাইলেন যে এটা মাবিয়ার কূটকৌশল, শত্রুদের রাজনৈতিক চাল, তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাও কিন্তু সৈন্যরা কিছুতেই আর যুদ্ধ করতে চাইলনা। ফলে মাবিয়া পরাজয়ের হাত থেকে প্রানে বেঁচে গেল এবং আল্লার কুরান মতে ফয়সালা হবে বলে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করে যুদ্ধ শেষ হল।
যুদ্ধের ফলাফলঃ
উভয় পক্ষ সিফফিনের যুদ্ধে তিন মাস বিশ দিন অবস্থান করছিলেন। এতে পরস্পর ৯০টি সংঘর্ষ হয়েছিল। এ আত্তঘাতী যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) এর ২৫ হাজার এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) এর ৪৫ হাজার সৈন্য সহ মোট ৭০হাজার মুসলমান  সিফফিনের যুদ্ধে শাহাদাত বরন করেন। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হল যে, হযরত আলী (রাঃ) এর পক্ষ হতে একজন ও মুয়াবিয়া (রাঃ) এর পক্ষ হতে একজন  সালিশ প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে একতি সুষ্ঠ সমাধান বের করবেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক হযরত আলী (রাঃ) এর পক্ষ হতে হযরত আবু মুসা আল-আশয়ারী(রাঃ) এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) এর পক্ষ হতে দুর্ত আমর ইবনুল আস নিযুক্ত করা হলচুক্তি মোতাবেক উভয়েই "আজরুহ" অথবা দওমাতুল জান্দালে ৪০০ জন সাথী সহকারে মিলিত হলেন। অনেক কথা কাটাকাটির পর উভয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে, হযরত আলী (রাঃ) এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) উভয়কে তাদের নিজস্ব পদ থেকে অপসারিত করা হবে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিমিত্তে নতুন করে খলিফা নির্বাচন  অনুষ্ঠিত হবে। এ ঐক্যমত্যের পর উভয়ে  সিদ্ধান্ত শুনানোর জন্য জনসম্মুক্ষে আগমন করেন। প্রথমে হযরত আবু মুসা আল-আশয়ারী (রাঃ) কে সিদ্ধান্ত শুনানোর জন্য আহবান করা হয়। তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষনের পর বললেন অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, আমরা হযরত আলী (রাঃ) এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) উভয়কে তাদের নিজস্ব পদ থেকে অপসারিত করলাম এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিমিত্তে নতুন করে খলিফা নির্বাচনের ঘোষনা দেয়া হল। তার পর আমর ইবনুল আস দাড়িয়ে বললেন  হযরত আবু মুসা আল-আশয়ারী (রাঃ) নিজের লোককে অপসারিত করেছেন তা আমি পূর্ন সমর্থন করছি।আর যেহেতু মুয়াবিয়া (রাঃ) হযরত ওসমান (রাঃ) এর কেসাসের হক আদায় এসেছেন সেহেতু খলিফার শুন্য পদে মুয়াবিয়া (রাঃ) কে অধিক যোগ্য মনে করে তাকে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ঘোষনা করছি। এতে হযরত আবু মুসা আল-আশয়ারী (রাঃ) উত্তেজিত ও রাগান্নিত হয়ে গাদ্দার,মিথ্যাবাদী বলে চিৎকার করে উঠেন। তাতে উভয় পক্ষের লোক উত্তেজিত হয়ে ব্যাপক হই চই রব উঠে ফলে সিদ্ধান্তটি চাপা পড়ে যায়। ফল শ্রুতিতে কোন সমাধান ছাড়াই সিফফিনের যুদ্ধ পরিসমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধটির ফলাফলে হযরত আলী (রাঃ) এর রাজনৈতিক পরাজয় হয় বিধায় হযরত মাবিয়া (রঃ) এর হাতে আমর ইবনুল আস সহ সিরিয়াবাসী বায়াত গ্রহন করে। 
বিষয়টি আলী (রাঃ) এর পক্ষের একটি দল মেনে নিতে পারেননি। এই দলের মতে যুদ্ধের ফলাফল কেবল আল্লাহর হাতে। মানুষ যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে না, অর্থাৎ সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করতে পারে না। শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।  যুক্তি হিসেবে তারা কুরআনের ٌان الحكم الا لله "অর্থাৎ সিদ্ধান্ত দিবেন শুধু আল্লাহ তায়ালা" আয়াতটি রেফার করল। তারা বলল আলী এবং মুয়াবিয়া কুরআনের বিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাই তারা উভয়েই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবার যোগ্য। এই দল আলী এবং মুয়াবিয়া উভয়ের পক্ষ ত্যাগ করল। ইতিহাসে এদেরকে বলে খারেজ; যার শাব্দিক অর্থ বের হয়ে আসা। খারেজ শব্দ খেকেই খারেজি শব্দের উৎপত্তি। এরা "হারুরা" নামক স্থানে এসে আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাবের নেতৃত্বে ১২০০(বারশত) সৈন্যের একটি শক্তিশালী দল গঠন করে। যারা ইরাক ও ইরানে গোলযোগ সৃষ্টি করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় তারা  হযরত আলী (রাঃ) এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) উভয়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে হযরত আলী (রাঃ) তাদের উৎপাতে ওসমান হত্যার বিচার স্থগিত রেখে ৬৫৯খৃষ্টাব্দে হিজরি ৩৯ সালে খারেজীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন ইতিহাসে এই যুদ্ধ ' নাহরাওয়ানের যুদ্ধ' বলে খ্যাতএ যুদ্ধে খারেজিদের মাত্র ১৮০০ সৈন্য অংশ নেয় বাকীরা পলায়ন করে যুদ্ধে তারা পরাজিত হয় পরবর্তীতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাদের সমুলে পরাহিত করে নির্মুল করেন
যুদ্ধের ফলাফলে সন্ধির ত্রুটি থাকার দরুন মুসলমানদের মধ্য চরম বিভক্তি পরিলক্ষিত হয়। সন্ধির প্রথম ত্রুটি ছিল আলী(রাঃ) ও মুয়াবিয়া(রাঃ) কে একই মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা। কারন হযরত আলী (রাঃ) ছিল জনগন কতৃক নির্বাচিত আইন সম্মত খলীফাতুল মুসলেমিন আর মুয়াবিয়া(রাঃ) ছিল প্রাদেশিক শাষন কর্তা, যাকে খলিফা নিজে পদায়ন দিয়েছিলেন। সুতরাং খলিফাকে এভাবে পদচ্যুত করা আলী(রাঃ) এর প্রতি অন্যায়। দ্বিতিয়তঃ আবু মুসা আল-আশয়ারী(রাঃ) এবং আমর ইবনুল আস ব্যক্তি বিষেশ জনগনের নির্বাচিত খলিফাকে অপসারন করতে পারেননা তাছাড়া খিলাফতের সমস্যা জনগনের সমস্যা যাতে ব্যাক্তির কোন এখতিয়ার নেই। ফলে এ অমিমাংশিত বিষয়টি খারেজী ও ওসমান(রাঃ) হত্যার সাথে জড়িত আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাঈ মুনাফেকের অনুসারীদের বিষেশ সুযুগ এনে দেয় মুসলিম বিশ্বে গোলযোগ এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করার। যা প্রত্যক্ষ ভাবে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে তরান্নিত করেছিল।

6 comments:

Powered by Blogger.