মহররমের দশ তারিখের (আশুরার) রোজার বিধান
ভুমিকা
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا
عَشَرَ شَهْرًا كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا
أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ
الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ -التوبة
: 36
নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গননার মাস বারটি, আসমান
সমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্য চারটি সম্মানিত।এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।সুতরাং
এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করনা।(সুরা তাওবা-৩৬)
মুহাররাম অর্থ- সম্মানিত । এটি আল্লাহর বিশেষ মাস
। মুহাররম মাসের দশম তারিখকে আরবীতে আশুরা বলা হয়। এই তারিখটি ইসলামে অতীব গুরত্বপুর্ণ।বিশেষ
করে এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আঃ) ও তার কাওমের লোকদেরকে অত্যাচারী ফেরাউনের
কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন । আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وإذ فرقنا بكم البحر فأنجيناكم وأغرقنا آل فرعون وأنتم تنظرون
"আর যখন তোমাদের জন্য
সমুদ্রকে পৃথক করে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম আর ফেরাউন ও তার সৈন্য দলকে পানিতে
নিমর্জিত করলাম তখন তোমরা দেখছিলে।"
আশুরার এই দিবসে সিয়াম পালন করা
অধিক ফযিলতপূর্ণ আমল। নিম্নে এদিনের রোজার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১। রাসুল [সাঃ] আশুরা (কারবালা) দিবসের
রোজা নিজে রেখেছেন এবং অন্যদের রাখার নির্দেশ দিয়েছেনঃ-
حدثنا أبو معمر حدثنا
عبد الوارث حدثنا
أيوب حدثنا
عبد الله بن سعيد بن
جبير عن أبيه عن
ابن عباس رضي
الله عنهما قال قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة فرأى
اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال ما هذا قالوا هذا يوم صالح هذا يوم نجى الله بني إسرائيل من عدوهم فصامه موسى قال فأنا أحق بموسى منكم فصامه وأمر بصيامه
ইবনে আব্বাস {রাঃ} থেকে বর্ণিত
রাসুলুল্লাহ যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরারা রোজা পালন করে।
তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন,"তোমরা এ দিনে কেন রোজা রাখ?" তারা
বলল,এটা এক মহান দিবস। এ দিনে আল্লাহ মুসা[আঃ] ও তার জাতিকে নাজাত দেন এবং ফেরাঊন
ও তার জাতিকে ডুবিয়ে হালাক-ধবংশ করেন। তাই মুসা[আঃ] ও তার জাতি এ দিনে আল্লাহর
শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে রোজা রাখেন আর এ জন্য আমরাও রোজা রাখি। রাসুলুল্লাহ
{সাল্লাল্লাহু} বললেন, আমরা মুসা[আঃ]-এর অনুসরন করার বেশী হকদার। এর পর তিনি
আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবাগনকেও রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
(২)নবী [সাঃ] এ দিনের রোজা বেশী বেশী
অনুসন্ধান করতেনঃ-
فعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَمَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ . " رواه البخاري
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি
বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে যেভাবে আশুরা ও রমজানের রোজা গুরত্ত সহকারে
অনুসন্ধান করতে দেখেছি অনুরুপ অন্য কোন রোজার ব্যাপারে দেখেনি।
(৩) এ দিনে ছোট বাচ্চারাও রোজা রাখতোঃ-
حدثنا مسدد حدثنا بشر بن المفضل حدثنا خالد بن ذكوان عن الربيع بنت معوذ قالت أرسل النبي صلى الله عليه وسلم غداة عاشوراء إلى قرى الأنصار من أصبح مفطرا فليتم بقية يومه ومن أصبح صائما فليصم قالت فكنا نصومه بعد ونصوم صبياننا ونجعل لهم اللعبة من العهن فإذا بكى أحدهم على الطعام أعطيناه ذاك حتى يكون عند الإفطار
রুবাই বিনতে মু'আওবেয
(রাঃ) তেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী(সাঃ) আশুরার দিন সকালে আনসারী সাহাবাগণের গ্রাম
গুলোতে দুত পাথিয়ে ঘোষনা দিতে বলেন "যে ব্যক্তি সকালে কিছু খেয়ে ফেলেছে সে
যেন বাকি সিন না খেয়ে পূর্ণ করে। আর যে ব্যক্তি না খেয়ে আছে সে যেন অবশ্যি রোজা
রাখে। তিনি(রুবাই) বলেন,এর পর আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও
রোজা রাখাতাম। আর তাদেরকে তুলা দ্বারা বানানো খেলনা দিতাম। যখন তাদের কেউ খানার
জন্য কাঁদতো তখন ইফতারী পর্যন্ত ঐ খেলনা দিয়ে রাখতাম।
(৪) রমজানের পূর্বে এই রোজা ফরয ছিলঃ-
حديث عروة عن عائشة رضي الله عنها أن قريشا كانت تصوم عاشوراء
في الجاهلية ثم أمر رسول الله عليه وسلم بصيامه حتى فرض رمضان فقال رسول الله صلى
الله عليه وسلم : " من شاء فليصمه ومن شاء فليفطره "
আয়েশা(রাঃ) থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন, জাহিলিয়াতের জামানায় কুরাইশরা আশুরার রোজা রাখতো এবং রাসুল
(সাঃ) ও রাখতেন। এরপর যখন তিনি মদিনায় আগমন করলেন তখন তিনি আশুরার রোজা রাখার আদেশ
দেন। অতঃপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হল তখন তিনি আশুরার রোজা(ফরজ)হিসেবে
রাখেননি।(সুন্নত হিসেবে রেখেছেন) এরপর যে চাইত রাখতো যে চাইত রাখতোনা।(বুখারী
হাদিস নং-১৮২৪)
(৫)রমজানের পরেই আশুরার রোজার স্থানঃ
قوله صلى الله عليه وسلم:
وغيرهما أفضل الصيام بعد رمضان شهر
الله المحرم، وأفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل
رواه مسلم
وأحمد
রাসুল (সাঃ)
বলেছেন," রমজানের পরে সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মোহাররামের
রোজা।(বুখারী-১৮৬৩)
(৬)আশুরার রোজা
বিগত এক বছরের গুনাহ সমুহের কাফফারাহঃ
أبي قتادة أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم عـاشوراء، فـقــــال يكفِّر السنة الماضية”:
“، وفي رواية: “صيام يوم
عاشوراء أحتسب على الله أن يكفـــر السنة التي قبله”( رواه مسلم، ح: 1162 ) وفـي
حديث آخر: “ومن صام عاشوراء غفر الله له سنة”( رواه البزار، انظر: مختصر زوائد البزار 1/407، وحسنه الألباني في صحيح الترغيب والترهيب:
1/422 بل إن صيامه يعدل صيام سنة، كما في رواية: “ذاك صوم سنة”( رواه ابن حبان: 8/394، ح/3631. قال شعيب الأرناؤوط: إسناده على شرط مسلم ).
আবু কাতাদা থেকে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি
বলেন, "আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করছিযে, তিনি বিগত
একবছরের পাপসমুহ ক্ষমা করে
দিবেন।(মুসলিম-১১৬২)
(৭)আশুরার রোজা রাখার নিয়মঃ
◊ শুধুমাত্র ১০ম তারিখ রোজা রাখা জায়েজ।
◊ .১০ম তারিখের সাথে ৯ম
তারিখ রোজা রাখা সুন্নাত। যাতে ইহুদীদের সাথে খেলাফ তৈরী করা যায়। রাসুল (সাঃ)
বলেছেন-
وعن ابن عباس رضي الله عنهما أيضاً قال : (حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ . قَالَ : فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) رواه مسلم (1134) .
وعن ابن عباس رضي الله عنهما أيضاً قال : (حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ . قَالَ : فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) رواه مسلم (1134) .
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
যখন রাসুল(সাঃ) আশুরার রোজা রাখেন এবং রাখার জন্য নির্দেশদেন। তখন সাহাবীগন বললেন,
হে রাসুল(সাঃ) এ দিনটিকে ইহুদী খৃষ্টানরা বড় সম্মান দান করে। রাসুল (সাঃ) বলেন আল্লাহ
চাহেতো যখন আগামী বছর আসবে আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখবো।কিন্তু পরের বছর আশুরা আসার
পুর্বেই রাসুল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন।(মুসলিম-১৯৭৬)
◊এই দিন রোজা রাখাও যাবে আবার ছেড়েও দেয়া যাবেঃ
وعن حميد بن
عبدالرحمن أنه سمع معاوية رضي اللَّه عنه يقول: سمعت رسول اللَّه صلى الله عليه
وسلم يقول: " هذا يوم عاشوراء، ولم يكتب اللَّه عليكم صيامه، وأنا صائم، فمن
شاء فليصم، ومن شاء فليفطر"
.
أخرجه البخاري (4/244) (ح2003) ، ومسلم (1129) ، والنسائي (4/204) ، ومالك في "الموطأ" (1/299) ، وابن خزيمة (2085) ، وابن حبان (8/390) ، (ح3626) ، والطبراني (19/326) (ح744) ، والبيهقي (4/290)، والبغوي في "شرح السنة" (1785).
أخرجه البخاري (4/244) (ح2003) ، ومسلم (1129) ، والنسائي (4/204) ، ومالك في "الموطأ" (1/299) ، وابن خزيمة (2085) ، وابن حبان (8/390) ، (ح3626) ، والطبراني (19/326) (ح744) ، والبيهقي (4/290)، والبغوي في "شرح السنة" (1785).
অনুবাদঃ হামিদ ইবনে আব্দুর রহমান
মুওয়াবি (রাঃ) থেকে শুনেন তিনি বলেন আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি' এই দিন হছে
আশুরাহ আল্লাহ এই দিনে তোমাদের উপর রোজা ফরজ করেননি, আর আমি এই দিন রোজা রেখেছি,
ইচ্ছা হয় তোমরা রোজা রাখ অথবা ছেড়ে দাও। (বুখারী-২৪৪)
◊ এই দিনকে
খুশির দিন মনে করা যাবেনাঃ-
وعن أبي موسى الأشعري
رضي اللَّه عنه قال، فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم:
"كان يوم عاشوراء يوماً تعظّمه اليهود، وتتخذه عيداً: "صوموه أنتم" .
وفي رواية لمسلم: " كان أهل خيبر يصومون يوم عاشوراء، يتخذونه عيداً، ويلبسون نساءهم فيه حليهم وشارتهم، فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم : فصوموه أنتم".
أخرجه البخاري (4/244) (ح2005) ، ومسلم (1131).
وفي رواية لمسلم: " كان أهل خيبر يصومون يوم عاشوراء، يتخذونه عيداً، ويلبسون نساءهم فيه حليهم وشارتهم، فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم : فصوموه أنتم".
أخرجه البخاري (4/244) (ح2005) ، ومسلم (1131).
অনুবাদঃ- হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
"এই দিন আশুরার মহিমান্নিত দিন, ইহুদিরা এ দিনকে সম্মানিত ও ঈদের দিন মনে
করে। অতএব তোমরা এই দিনে রোজা রাখ।
অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- খায়বর বাসীরা এ দিনে রোজা
রাখে, ঈদ পালন করে, তাদের নারীরা অলংকার পরিধান করে এবং সাজসজ্জা হেতু সুন্দর
সুন্দর জামা-কাপড় পরিধান করে। অতএব তোমরা এ দিনে রোজা পালন
কর।(বুখারী-১১৩১)(মুসলিম-২০০৫)
ইমাম নব্বী বলেন - وشارتهم হল সুন্দর সুচারু পরিধেয় জামা-কাপড় । ইবনে আছীর বলেন وشارتهمহল দেখতে সুন্দর নান্দনিক দৃশ্যের অবতারনা করা।
ইমাম নব্বী বলেন - وشارتهم হল সুন্দর সুচারু পরিধেয় জামা-কাপড় । ইবনে আছীর বলেন وشارتهمহল দেখতে সুন্দর নান্দনিক দৃশ্যের অবতারনা করা।
(৮) আশুরার
কিছু বিধানঃ
◊ শুধু
মাত্র নবম তারিখে রোজা রাখা ঠিকনা।
◊ শুধু দশম
তারিখে রোজা রাখা কেউ কেউ মাকরুহ বলেছেন।সঠিক মত হল জীবনে একবার ৯ম ও ১০ম তারিখে
রোজা রাখলে মাকরুহের বিধান ব্যক্তির উপর বর্তাবেনা। কারন একবার ভিন্ন করলেই ইহুদি-খৃষ্টানদের
খেলাপ হয়ে যায়। তার পরবর্তীতে শুধু ১০ম তারিখ রোজারাখলেই হবে।
Email: balalhosan@gmail.com
Mobile: 01712907983
No comments